দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হবে, আশা এবি পার্টির
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী বলেছেন, ‘আশা করি, তারা দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবেন এবং একটি গণতান্ত্রিক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।’
আজ রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এবি পার্টি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এক মাস : কেমন গেল, কেমন যেতে পারত!’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব উদ্বেগের কথা জানান নেতারা। এবি পার্টির আহ্বায়ক এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জুর সঞ্চালনায় এ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে অতিথি বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, ১২ দলীয় জোটের প্রধান মোস্তফা জামাল হায়দার, বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মোহাম্মদ মশিউজ্জামান, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, খেলাফত মজলিসের সেক্রেটারি অধ্যাপক ড. আহমদ আব্দুল কাদের, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, এবি পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মেজর (অব.) আব্দুল ওহাব মিনার ও বি এম নাজমুল হক, এবি যুব পার্টির আহ্বায়ক শাহাদাত উল্লাহ টুটুল, এবি পার্টি উইমেন ইনচার্জ ব্যারিস্টার নাসরীন সুলতানা মিলি, বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্সসহ জাতীয় নেতারা।
সভায় আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর আজ এখানে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারছি, এটা আমার বাংলাদেশ। শেখ হাসিনা পলায়নের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি, যেখানে মানুষ নতুন করে চিন্তা করছে। এখন মানুষ মুক্তভাবে বাঁচতে চায়, চলতে চায়। দেশের শতকরা প্রায় ৬৫ শতাংশ মানুষ তরুণ যুবক, তাদের চিন্তাকে ধারণ না করে বাংলাদেশে কেউ রাজনীতি করতে পারবে না। আমরা বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলব, আপনারা মানুষের ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন।’
সভাপতির বক্তব্যে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘রাষ্ট্রকে মেরামত করা লম্বা সময়ের কাজ, তারপরও অতিদ্রুত এগুলো করতে হবে। পতিত স্বৈরাচার মিথ্যা মামলা দিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের হয়রানিমূলক মামলায় যারা কারাগারে আটকে ছিলেন, তাদের মুক্তি দেওয়ার মাধ্যমে এই সরকার গুরুত্বপূর্ণ গণতান্ত্রিক ভুমিকা পালন করেছেন। এই সরকার ক্ষমতায় আসার পর বন্যাসহ নানাবিধ সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আমরা তাদের সর্বাত্মক সহোযোগিতা করছি এবং করব, ইনশাআল্লাহ। আশা করি, তারা দেশের মানুষের আশা আকাঙ্ক্ষার কথা বিবেচনায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবেন, জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবেন এবং একটি গণতান্ত্রিক সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘একমাসে অনেকেই নানা প্রস্তাব নিয়ে হাজির হচ্ছে। শত শত প্রস্তাব আসছে আসবে কিন্তু সরকারকে ঠিক করতে হবে, এই সময়ে দেশ ও দেশের জনগণের মৌলিক প্রয়োজন কী? সেটা নির্ধারণ না করলে সঠিকভাবে আপনারা এগোতে পারবেন না। কোনো বিতর্কিত বিষয় নিয়ে আলোচনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ না।’
ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘অনেকে বলছেন, এটা একটা বিপ্লবী সরকার। আসলে এটা একটা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার, যেহেতু এই সরকার বর্তমান সংবিধানকে মেনে চলছে।’
দিলারা চৌধুরী বলেন, ‘পুলিশ এখনও সক্রিয় হয়নি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে সক্রিয় করার কোনো বিকল্প নেই। আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র চাই, মানবিক দেশ চাই, যেখানে নাগরিকের অধিকার কখনো বিঘ্নিত হবে না।’
কমরেড সাইফুল হক বলেন, ‘গত একমাসে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশের মানুষের সাফল্য ভারতের হিন্দুত্ববাদী নরেন্দ্র মোদির সরকার মেনে নিতে পারেনি। তাদের তৎপরতা দেখে মনে হচ্ছে, শুধু আওয়ামী লীগ পরাজিত হয়নি, পরাজিত হয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।’ তিনি শ্রমিকদের ন্যায্যদাবি সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে শুনে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘একমাস একটি সরকারের মূল্যায়নের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এই সরকারকে বুঝতে হবে জাতির জন্য যে সমস্ত ছাত্র-জনতা অকাতরে জীবন দিয়েছে, তাদের ভূমিকা অনন্য। সেই শহীদদের প্রতি আমাদের কর্তব্য আমরা পালন করছি কি না? এখনও আহতদের কান্না আমাদের হতবিহ্বল করে। এই সরকারকে অবশ্যই গণহত্যাকারীদের সঠিক বিচারের আওতায় আনতে হবে।’
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন এবি পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, প্রচার সম্পাদক আনোয়ার সাদাত টুটুল, সিনিয়র সহকারী সদস্য সচিব এ বি এম খালিদ হাসান, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আলতাফ হোসাইন, সহকারী সদস্য সচিব ব্যারিস্টার সানী আব্দুল হক, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ লোকমান, শাহ আব্দুর রহমানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগরীর বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।