স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা দিদারের লাশ হস্তান্তর, হত্যাকারীদের শাস্তির দাবি
গোপালগঞ্জে স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারকে হত্যা এবং সভাপতি এস এম জিলানীর ওপর হামলার প্রতিবাদে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে, হত্যার ঘটনায় এখনও কোনো মামলা হয়নি। আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দিদারের মরদেহ স্থানীয় বিএনপির নেতা ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে আজ শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় শহরের পুরাতন লঞ্চঘাট থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে গোপালগঞ্জ জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। মিছিলটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় কালী বাড়ির মোড়ে এসে শেষ হয়।
এ সময় জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাজ্জাদ হোসেন হীরা বক্তব্য দেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শরীফ রফিক উজ্জামান, সদস্য ডাক্তার কে এম বাবর, অ্যাডভোকেট তৌফিকুল ইসলাম, জেলা যুবদলের সভাপতি রিয়াজ উদ্দিন লিপ্টন, সাধারণ সম্পাদক রাশেকুজ্জামান পলাশসহ দলীয় নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
একই দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে কোটালীপাড়া ও মুকসুদপুর উপজেলা বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। কোটালীপাড়া ঘাগর বাজার চৌরাস্তা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ঘাগরকান্দায় এসে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি এস এম মহিউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক আবুল বাশার হাওলাদার, বিএনপিনেতা অলিউর রহমান প্রমুখ।
মুকসুদপুর উপজেলা সদরেও প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আজ সকাল থেকেই বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল মর্গের সামনে জড়ো হন। আসেন নিহত শওকত আলী দিদারের স্ত্রী রোকেয়া বেগম ও তার শশুর হাবিবুর রহমান। সকাল ১০ দিকে শেষ হয় ময়নাতদন্ত। এরপর আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দিদারের মরদেহ স্থানীয় বিএনপিনেতা ও পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে শওকত আলী দিদারের শ্বশুর মরদেহটি বুঝে নেন।
নিহতের স্ত্রী রোকেয়া রহমান বলেন, ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এস এম জিলানীর গাড়ি বহরে হামলা হয়েছে। পোস্ট দেখে বহরে থাকা আমার স্বামীর মোবাইলে ফোন দিই। তখন জনৈক পুলিশ ফোনটি রিসিভ করেন। আমাকে জানান, শওকত আলী দিদার মারা গেছেন। এ খবর শুনে আমার বাবা হাবিবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে দ্রুত গোপালগঞ্জে ছুটে যান। দলীয় ও পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মামলা এবং মামলার বাদী নির্ধারণ করা হবে। আমার স্বামীর এই অকাল মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বিচার হওয়া উচিত। আমাদের দুটি নাবালক ছেলে রয়েছে। আমার স্বামীর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার এবং সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।
হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে নিহত দিদারের শ্বশুর হাবিবুর রহমান বলেন, যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের যেন ফাঁসি হয়। মানুষ তার নিজের বাড়িতে আসতে পারবে না, এলে তাকে আক্রমণ করবে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। কেন্দ্রীয় নেতাদের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বাকি কাজ করব। এরপর মরদেহটি ঢাকা নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা জানান, দলীয় হাইকমান্ডের সঙ্গে কথা বলে দ্রুত মামলা করা হবে।
শুক্রবার বিকেল ৩টায় গোপালগঞ্জের বেদগ্রামে পথসভা শেষ করে গাড়িবহর নিয়ে টুঙ্গিপাড়ার জনসভায় যোগ দিতে যাচ্ছিলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম এবং কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী। বিএনপির অভিযোগ, ঘোনাপাড়া এলাকায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের কিছু নেতাকর্মী তাদের গাড়ির গতিরোধ করে। ভাঙচুর করে বেশ কয়েকটি গাড়ি। এ সময় বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে আহত করা হয় কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, তার স্ত্রী গোপালগঞ্জ জেলা মহিলা দলের সভাপতি রওশন আরা রত্না ও তাদের সন্তানসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় স্থানীয় অন্তত ৩৫ জন নেতাকর্মীকে।
পরে রাত ৭টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের চরপাথালিয়া এলাকা থেকে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।