‘সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা জনগণের হাতে ফিরিয়ে দিতে হবে’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ছাত্র জনতার বিপ্লবে এই সরকার এসেছে। তাই তাদের দায়িত্ব বড়। বর্তমান সরকার জনগণের মতামত নিয়েই চলবে। তারা চলছেও বলে মনে করি। এদেশ থেকে এখন স্বৈরাচার বিদায় হয়েছে, তাই মুক্তভাবে কথা বলতে পারছি। তার বিদায় না হলে হয়তো এভাবে কথা বলতে পারতাম না। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে।
'দি মিলেনিয়াম ইউনিভার্সিটি আয়োজিত' অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দুই মাস' শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এসব কথা বলেন তিনি। আজ মঙ্গলবার বিকালে গুলশানের একটি হোটেলে এর আয়োজন করা হয়। এতে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভিও বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আয়োজক বিশ্ববিদ্যালয়ের বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট রোখসানা খন্দকার। এতে স্বাগত দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. অভিনয় চন্দ্র সাহা।
ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আগে সংস্কার পরে নির্বাচন এটা কোন কথা নয়। সংস্কার এবং নির্বাচন দুটোই সমান্তরালে চলতে হবে, সরকারও এখন একথা বলছে—এটি ভাল লক্ষণ। তিনি বলেন, যেসব কাজ সরকার করছে তা যত দ্রুত করা দরকার সেভাবে কী করেছে? বর্তমান সরকারের আমলে কেন দ্রব্যমূল্যের উর্দ্ধগতি হবে? এটা তো হওয়ার কথা নয়।
মঈন বলেন, গত দুই মাসে অন্তত ১০টি অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটেছে, যা সরকারকে মোকাবিলা করতে হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবির বলেন, সরকার পতনে যে আন্দোলন ছিল তা ছিল সব মানুষের আন্দোলন। আশার কথা হচ্ছে, দেশের বিদ্যমান সব রাজনৈতিক দল বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। সবাই সংস্কারও চাচ্ছে এ নিয়ে মতের কোনো পার্থক্য নেই। এই সরকার যেন সফল হয় এজন্য আমাদের সবার সহযোগিতা করতে হবে। সরকারকে সফল করে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যেতে হবে আমাদের।
নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, এই সরকার এখনো তেমন কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। পতিত সরকারের প্রেতাত্মারা এখনো রয়েছেন। রাজনৈতিক দলগুলো নিয়ে সংলাপের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটা চা-চক্র বলা যেতে পারে। প্রতিটি দলকে তারা একদিন করেও সময় দিতে পারেননি। বিএনপির মত দলকে এই সরকার হিসেবে গুনছে না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সাবেক মহাসচিব নুর খান লিটন বলেন, আমরা এখনো ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারছি না। অনেকের কথা শুনে মনে হয় পৃথিবীর শেষ পর্যন্ত তারা দেশ চালাতে চান। বিগত সরকারও এমন ভেবেছিল। দেশে দেদারসে মামলা চলছে। এসব মামলার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে, যা দুঃখজনক।
গণফোরামের অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, দেশের সব জায়গায় শেখ হাসিনার দোসররা বসে আছে এখনও। এটি কাম্য নয়।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই ইচ্ছা করে কল রেকর্ড বিদেশ থেকে ফাঁস করছেন। তিনি বিদেশে থেকে এখনো ভয় দেখাচ্ছেন। সরকার পতনের আগে আওয়ামী লীগ ছাত্র আন্দোলন দমন করতে নেতাকর্মীদের মধ্যে অস্ত্র বিলি করেছিল বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
গুম হওয়া সদস্যদের পরিবারদের সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি বলেন, সব গুম ও জুলাই বিপ্লবের খুনের বিচার হতে হবে। এ সরকার সফল না হলে আমরা সফল হব না। কিন্তু যে গতিতে গুম ও খুনের বিচার নিয়ে কাজ করার কথা ছিল তেমন গতি দেখছি না। নিলফামারীতে আসাদুজ্জামান নুর যে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ড করেছেন তার বিচার হওয়া দরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, এ সরকার বিপ্লবের সরকার। কিন্তু এই উপদেষ্টাদের মধ্যে বিপ্লবী সরকারের চরিত্র দেখা যাচ্ছে না। এই উপদেষ্টাদের অনেককে গণঅভ্যুত্থানের সময় কোন ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের বিচার করার সাহস এ সরকারের নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ পরিবার বা আওয়ামী লীগ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের এখনো গ্রেফতার করা হয়নি। বরং তাদের বিদেশে পালিয়ে যেতে দেওয়া হয়েছে। এদের পালিয়ে যাওয়ার দায় নিতে হবে। আওয়ামী লীগের সন্তানরা দেশকে মৌলবাদি রাষ্ট্র হিসেবে বিদেশে বার্তা দিতে স্কুলড্রেস পড়ে কালো পতাকা নিয়ে খেলাফত প্রতিষ্ঠার কথা বলে মিছিল করছে।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক শওকত হোসেন, অধ্যাপক মোস্তফা নাজমুল মনসুর, সাংবাদিক আবু সাইদ খান, সাংবাদিক মাসুদ কামাল, সাংবাদিক আশরাফ কায়সার প্রমুখ।