যশোরে দুই সাবেক ওসিসহ ৮ পুলিশের বিরুদ্ধে আদালতে তিন মামলা
বিচার বহির্ভূত হত্যা, ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় ও ডাকাতির পৃথক অভিযোগে যশোরের সাবেক দুই ওসিসহ আট পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী ও তাদের স্বজনরা আজ বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) আদালতে এই মামলাগুলো করেন।
যশোর সদর উপজেলার খোলাডাঙ্গা এলাকায় তাইজেল মোল্যা নামে এক ব্যক্তিকে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যার অভিযোগে তাঁর ভাই তানভীর রহমান তন্ময় বাদী হয়ে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেছেন। মামলায় কোতোয়ালি থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসান, উপপরিদর্শক (এসআই) হাসানুর রহমান হাসান, কনস্টেবল রোকনুজ্জামান, কনস্টেবল আবু হাসান ও শহরের পুরাতন কসবা কাজীপাড়ার ফেরদৌস হোসেন সোমরাজকে আসামি করা হয়েছে।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কবীর এই ঘটনায় ওই সময় থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না—এ ব্যাপারে সাত কর্মদিবসের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য কোতোয়ালি থানার বর্তমান ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী ফেরদৌস হায়দার।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর গভীর রাতে আসামিরা তাইজেল মোল্যাকে তাঁর শ্বশুর বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। খবর পেয়ে স্বজনরা কোতোয়ালি থানায় গেলে তৎকালীন ওসি পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরের দিন সকালে স্বজনরা জানতে পারেন, তাইজেলের গুলিবিদ্ধ মরদেহ শহরের পুরাতন কসবা বেগম মিলের পাশে পড়ে আছে।
এদিকে মণিরামপুরে বিএনপিকর্মীকে তুলে নিয়ে মারপিঠ ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ছয় লাখ টাকা নেওয়ার অভিযোগে মণিরামপুর থানার তৎকালীন ওসি খবির উদ্দীনসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে।
ঘটনার নয় বছর পর ভুক্তভোগী অনিক হোসেন জনি আজ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। বিচারক ইমরান আহমেদ এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদী অনিক হোসেন জনি যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার আজগর হোসেনের ছেলে। মামলার অপর আসামিরা হলেন মণিরামপুরের খেদাপাড়া পুলিশ ক্যাম্পের তৎকালীন ইনচার্জ এসআই সোহরাব, মণিরামপুর উপজেলার শৈলী গ্রামের মৃত নূর বকস গাজীর ছেলে আতিয়ার রহমান, মৃত আতিয়ারের ছেলে আশিকুর রহমান, একই উপজেলার খাটুরার মৃত আজিবর মোল্যার ছেলে আবুল কালাম আজাদ, মৃত মোজাম মণ্ডলের ছেলে ইসহাক, শৈলীর মৃত মোজাহারের ছেলে মাস্টার রবিউল ইসলাম, মদনপুরের মৃত সৈয়দ আলীর ছেলে শফি, ছোটছালামতপুরের ইব্রাহিমের ছেলে লাল্টু, মধুপুরের সাত্তারের ছেলে মনি ও বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার সুরেন তরফদারের ছেলে শুলেন তরফদার।
বাঘারপাড়া উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের একটি হাঁস-মুরগি ও গরু-ছাগলের খামারে ডাকাতির অভিযোগে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আওয়ামী লীগের ৪০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। নলডাঙ্গা গ্রামের মৃত নেছার আলীর ছেলে বিএনপিনেতা খামার মালিক আবু ইছা বাদী হয়ে আজ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। মামলার আসামিদের মধ্যে রায়পুর পুলিশ ক্যাম্পের তৎকালীন এসআই আব্দুল আজিজ, এএসআই নিয়ামুল রয়েছেন। বিচারক পলাশ কুমার অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী ফিরোজ রানা।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর গভীর রাতে স্থানীয় আওয়ামী লীগের ৪০ থেকে ৫০ নেতাকর্মী বাদীর খামারে হামলা চালিয়ে কর্মীদের মারপিট ও লুটপাট করেন। অথচ পরের দিন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা বাদীকেই ক্যাম্পে ধরে নিয়ে নিয়ে গিয়ে মিথ্যা মামলা দিয়ে থানায় পাঠিয়ে দেন।