আমরা পার্শ্ববর্তী দেশের গোলাম হয়ে থাকতে চাই না : মেজর হাফিজ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা একটা স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করতে চাই। পার্শ্ববর্তী দেশের গোলাম হয়ে আমরা কেউ থাকতে চাই না। জুলাই-আগস্টের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আমরা আবার একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেয়েছি, সেটিকে হেলায় হারাতে চাই না।
আজ সোমবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের নামে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার, খুনি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার এবং সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে এ আলোচনা সভায় আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
হাফিজ উদ্দিন বলেন, ১৭ বছর ধরে এমন এক স্বৈরাচার শাসক আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছিল। ছাত্র-জনতা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সেই স্বৈরাচার ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ১৯৭১ সালে জাতির যারা বড় বড় নেতা ছিলেন, তারা গর্তে বা পার্শ্ববতী দেশে লুকিয়ে ছিলেন। স্বাধীনতাকামী মানুষ আমরা মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আওয়ামী লীগ কখনো কাউকে কৃতিত্ব দিতে জানে না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, বিতাড়িত স্বৈরাচারী শক্তি ভারতে বসে নতুন করে ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। চারদিকে ভয়ঙ্কর গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, শেখ হাসিনার নাকি পদত্যাগপত্র পাওয়া যাচ্ছে না, কারো কাছে নেই তার পদত্যাগপত্র। এর মধ্য দিয়ে একশ্রেণীর মানুষকে বোঝানো হচ্ছে, শেখ হাসিনা এখনো বৈধ প্রধানমন্ত্রী। এর চেয়ে বড় আর মিথ্যাচার হতে পারে না।
“শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করেছে বাংলাদেশ সরকার, তিনি যে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁকে অন্য দেশে পাচার করছে সেই রাষ্ট্র। এরপর পদত্যাগপত্রের কী প্রয়োজন আছে?”
এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপির এই নেতা বলেন, “শেখ জামাল ও কামালের কি এমন আত্মত্যাগ আছে এ দেশের জন্য? তাদের জন্য রাষ্ট্রীয় ছুটি দিবস পালন করতে হবে কেন”।
হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ব্যালটের রাজনীতি ছাড়া আওয়ামী লীগের মধ্যে স্বাধীনতার ঘোষণার কোন মানসিকতাও ছিল না। ২৭ মার্চ আওয়ামী লীগ হরতাল ডেকেছিল। তাজউদ্দীন আহমদ বারবার স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু শেখ মুজিব স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা দিলে বিচ্ছিন্নতাবাদী হবেন! ঘোষণা দিলে তিনি নাকি পাকিস্তানের সরকারের বিচারের মুখোমুখি হবেন; এমন কথা বলেছিলেন শেখ মুজিব। শেখ মুজিব ও আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ঘোষণা দেয় নাই। স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন মেজর জেনারেল শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার নেতৃত্বে জনতা মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এরপর ৭২ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস মুছে ফেলে।
স্বৈরাচার চলে গেলেও তার টিমের রাষ্ট্রপতি এখনো বহাল তবিয়তে আছেন জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার হয়তো জানে না, কোনভাবে বাংলাদেশের মানুষের জনজীবনে দুর্যোগ নেমে এলে বা টালমাটাল হলে, এই ব্যক্তি আবার শেখ হাসিনার বন্দনায় নেমে পড়বেন। এতে কোন সন্দেহ নেই। তারা এত অপরাধ করেছে, শেখ হাসিনা ছাড়া এদেরকে বাঁচানোর কেউ নেই। তাঁকে ছাড়া ভাবতে পারে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের যারা আন্দোলনে সংগ্রামে ছিলেন, যারা ১৭ বছর ধরে নির্যাতন ও জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন, তাদেরকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেন। দেখেবেন, রাতে যারা মিছিল করে বারবার দরকার শেখ হাসিনা সরকার, তারা আর বের হওয়ার সাহস পাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাতে অনেক দুর্বল লোক আছে, আওয়ামী প্রীতির মানুষও আছে এদের সরিয়ে ফেলুন। শুধু পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করা মানুষ দিয়ে দেশ পরিচালনা করা যায় না, এরা মানুষের সাথে কখনো মেশেনি। মানুষের জন্য কখনো কাজ করেনি। দুষ্টু লোকেরা বলে থাকেন, এরা ক্ষমতা ভোগ করতে এসেছে। একটি সুন্দর সরকার গঠন করে বাংলাদেশকে আবার ট্র্যাকে নিয়ে আসুন। ট্র্যাক বা লাইনচ্যুত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।
হাফিজ বলেন, ইউনূস এ দেশের কৃতি সন্তান, তাঁকে সম্মান করি। বিএনপি ও ছাত্র-জনতার তাঁর প্রতি সমর্থন আছে। সংস্কারের জন্য বেশিদিন সময় নেওয়া যাবে না, নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগ সংস্কার হলেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা সকল বিষয় সংস্কার করবে।
গণতন্ত্রকামী মানুষের বিরুদ্ধে যত মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তা প্রত্যাহারে জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি করেন তিনি।
আমরা চাই না এই সরকার ব্যর্থ হোক এমন মন্তব্য করে হাফিজ উদ্দিন বলেন, এই সরকার ব্যর্থ হলে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়ে যাবে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্র সফল হয়ে যাবে। আমরা কারো গোলাম হতে চাই না, আমরা সিকিম হতে চাই না। ৫ই আগস্টের এত বড় বিপ্লবকে আমরা ব্যর্থ হতে দিতে পারি না। আমরা অবশ্যই চাইবো ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার সফল হোক।
বিরাট ষড়যন্ত্রের মধ্যে নিমজ্জিত বাংলাদেশ এমন মন্তব্য করে হাফিজ বলেন, এদেশের ঐক্য ও স্বাধীনতাকে বিনষ্ট করার জন্য, মানুষের জীবনে আবার দুর্যোগ নেমে আনার জন্য প্রতিবেশী রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে। তার প্রমাণ, এদেশের জনধিকৃত ও বিতাড়িত ব্যক্তিরা ভারতে বসে এদেশের মানুষের বিরুদ্ধে ও দেশের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। এ ষড়যন্ত্র থেকে আমাদের দেশকে মুক্ত করতে হবে।
আনুপাতিক নির্বাচন চাওয়ার সমালোচনা করে হাফিজ বলেন, আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের সংবিধান ৭১ ও ৭২ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর আজ অব্দি কনস্টিটিউশন ভিত্তিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া রয়েছে। জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে কোনটি হবে। কোনভাবেই কোন ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। জনগণের মত ও অধিকারকে অপেক্ষা করার সুযোগ নেই। বিএনপি মনে করে কনস্টিটিউশন ভিত্তিক যে নির্বাচন প্রক্রিয়া তা অব্যাহত থাকবে এবং ৩১ দফায় দেওয়া আছে কী ধরনের সংস্কার চাই।