আশুলিয়ায় আজও পোশাক শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ, তীব্র যানজট
বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও বকেয়া বেতনের দাবিতে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার বাইপাইলে দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। আজ মঙ্গলবার (২২ অক্টোবর) সকাল থেকে অবরোধের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে ঢাকা- টাঙ্গাইল, বাইপাইল-আব্দুল্লাহপুর মহাসড়কে যান চলাচল। এর প্রভাব পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কেও।
অবরোধের মুখে মহাসড়কে আটকে পড়েছে যানবাহন। উভয় পাশে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘ যানজটের। চরম ভোগান্তির মুখে পড়েছেন স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ অফিসগামী যাত্রীরা।
অবরোধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিল্পপুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম। তিনি বলেন, যখন তখন সড়ক অবরোধ করে দাবি আদায়ের হাতিয়ারকে কার্যকর করার প্রবণতা শিল্পাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ক্রমশ নাজুক করে তুলেছে।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবে রক্তক্ষয়ী অধ্যায়ের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপরেই আশুলিয়ার ইয়ারপুরে ভারতীয় মালিকানাধীন জেনারেশন নেক্সট ফ্যাশন লিমিটেড নামের তৈরি পোশাক কারখানার শীর্ষ কর্মকর্তারা একে একে স্বদেশে চলে যান। এরপর আর্থিক টানেপোড়েন ও রপ্তানি আদেশ কমতে থাকায় সংকটে পড়ে কারখানাটি। অনিয়মিত হয়ে পড়ে বেতন-ভাতা।
গত রোববার সকাল থেকে কারখানার সামনে জমায়েত হয়ে মিছিল নিয়ে শ্রমিকরা অবস্থান নেন বাইপাইল পয়েন্টে। রাত ১১টা পর্যন্ত টানা অবরোধ শেষে শ্রমিকরা ফিরে যান। আজ সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো দাবি আদায় শ্রমিকরা অবস্থান নেন সড়কে। খবর পেয়ে শিল্প পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সড়ক থেকে অবরোধ তুলে নেবার অনুরোধ করলেও তাতে সায় দেননি শ্রমিকরা। শ্রমিকদের অনড় অবস্থানের মুখে একপর্যায়ে শিল্প পুলিশ ও সেনার সদস্যরা স্বল্প দূরত্বে অবস্থান নেন।
শ্রমিকরা জানান, দুই মাসের বেতন বকেয়া থাকায় তারা বাড়ি ভাড়াসহ মুদি দোকানদারের টাকা পরিশোধ করতে পারছেন না। অনেকেই মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষকে বেতন প্রদানে বাধ্য করার লক্ষ্যে তারা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন।
শ্রমিকরা জানান, এর আগে সার্ভিস বেনিফিট ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা লাগাতার অবরোধ করলে টানা ৫২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে মহাসড়কে যান চলা। এমন পরিস্থিতিতে কর্তৃপক্ষ মালিককে কারখানায় ধরে এনে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের উদ্যোগ নেয়। এভাবে তাদের বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ নেওয়ার দাবি করেন।
অবরোধের বিষয়ে শিল্প পুলিশ আশুলিয়া জোনের পুলিশ সুপার মো. সারোয়ার আলম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর দাবি আদায়ে মহাসড়ক অবরোধ করাটাই প্রচলিত। আমরা শ্রমিকদের বোঝানোর চেষ্টা করেছি। তারা কর্ণপাত করছেন না। যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা এনে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেছেন সেনা সদস্যরাও। তাতেও সায় দেয়নি শ্রমিকরা। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ধৈর্য ধারণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।’
এর আগে আশুলিয়ার বার্ডস গ্রুপের চারটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকরা সার্ভিস বেনিফিটের দাবিতে একই অবস্থানে টানা অবরোধ করে রাখলে নজিরবিহীনভাবে মহাসড়কে ৫২ ঘণ্টা যানচলাচল বন্ধ থাকে। স্থবির হয়ে ওঠে জনজীবন।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর পুলিশ বাহিনীর দুর্বলতা ও বিভিন্ন কারখানার ব্যবস্থাপনাগত সংকটের কারণে যখন তখন মহাসড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটছে।