বাকশালি সংবিধানের অজুহাতে সংস্কার দেরি কেন, প্রশ্ন রিজভীর
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে প্রশ্ন রেখে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘বর্তমান সংবিধান তো বাকশালি সংবিধান, এই সংবিধান তো কর্তৃত্ববাদী সংবিধান। তাহলে এই সংবিধানের অজুহাত দিয়ে কেন আপনারা বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিতে, সংস্কার করতে দেরি করছেন?’
আজ শনিবার (৯ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার ইনস্টিটিউশনে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রিজভী।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রুহুল কবির বলেন, ‘আপনারা তো বিপ্লবের মাধ্যমে তৈরি হওয়া একটি সরকার। এই সরকারের সবকিছু যে সংবিধান অনুযায়ী হতে হবে, সেটার তো কোনো দরকার নেই। কারণ বিপ্লবের মধ্য দিয়ে যে সরকার গঠিত হয়, সেই সরকারকে নতুন করে সবকিছু করতে হয়, নতুন করে সব কিছু রাখতে হয়। যাতে গণতন্ত্রের ইনস্টিটিউশনগুলো ডেভলপ করে, সেই প্রচেষ্টার জন্য আপনাদের অনেক কাজ করতে হবে। যেটা বর্তমান সংবিধানের মধ্যে সংবিধিবদ্ধ নয়, এটা তো শেখ হাসিনার সংবিধান। শেখ হাসিনা এই সংবিধানকে কাটাছেঁড়া করে এমন একটি সংবিধান তৈরি করেছে। এই সংবিধান তো বাকশালি সংবিধান, এই সংবিধান তো কর্তৃত্ববাদী সংবিধান। তাহলে এই সংবিধানের অজুহাত দিয়ে কেন আপনারা বিভিন্ন প্রদক্ষেপ নিতে, সংস্কার করতে দেরি করছেন?’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা তো নিজেরাও সংবিধানের আওতায় ক্ষমতায় আসেননি, কিন্তু জনসমর্থন আপনাদের প্রতি রয়েছে। আপনাদের সবকিছু দ্রুত গতিতে পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনাদের কাজের গতির তীব্রতা যদি কমে যায়, তাহলে এটা জনগণের কাছে অ্যাকাউন্টটিবিলিটির ক্ষেত্রে জনগণ মনে করবে, আপনারা সঠিক কাজ করছেন না।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা গায়ের জোরে তার প্রভুদেরকে সন্তুষ্ট করার জন্য একের পর এক কাজ করেছেন। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সংবিধানে আল্লাহর ওপর বিশ্বাস ও আস্থা সংযুক্ত করেছিলেন। এটা কি কোনো মানুষ অস্বীকার করে? আর শেখ হাসিনা যা করেছেন, সবকিছুই তো গায়ের জোরে করেছেন। জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন আধুনিক সেনাপতি, একজন আধুনিক রাষ্ট্রনায়ক, একজন আধুনিক রাষ্ট্রপতি। তিনি দেশের মানুষের ন্যূনতম চেতনাকে সম্মান দেখিয়ে সংবিধানে সংযুক্ত করেছিলেন আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের দেশকে যারা পছন্দ করে না, যারা শুধু শেখ হাসিনাকে পছন্দ করেন। এই ধরনের কিছু বিদেশি শক্তি বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শক্তিশালী হোক, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী বিশ্বের একটি আধুনিক চৌকস বাহিনীতে পরিণত হোক, এটা চায় না। বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, পার্লামেন্ট, প্রশাসন—এগুলো ভালো হোক, প্রাণবন্ত হোক, তারা চায় না।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা শুধু তাদেরকে খুশি করার জন্য তিনি একের পর এক দেশবিরোধী কাজগুলো করে গেছেন। শেখ হাসিনা তার মন্ত্রীদের এবং তার পছন্দের সরকারি কর্মকর্তাদের বলেছিলেন, তোমরা খাও দাও ফুর্তি করো, আমি কী করছি এগুলো দেখার দরকার নেই। আর যারা আমার বিরুদ্ধে কিছু করবে তাদেরকে তোমরা যেভাবে পারো দমন করো, তাদেরকে আয়নাঘরে নিয়ে যাও, তাদেরকে গুম করো, তাদেরকে খুন করো, তাদেরকে ক্রসফায়ার দাও, যেভাবেই হোক দমন করো, তোমাদেরকে কেউ কিছুই বলবে না। এভাবেই তো তিনি দেশ চালিয়েছেন।’
রিজভী আরও বলেন, ‘এই ধরনের একজন নরক ঘাতককে এদেশের ছাত্র জনতা এবং গণতন্ত্রের মানুষ বিদায় করেছে। সেই পরিস্থিতির আবার পুনরাবৃত্তি হোক, এটা তো এদেশের মানুষ আর চায় না।’
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় কৃষকদলের সভাপতি কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোশারফ হোসেন কৃষকদলের কেন্দ্রীয় য় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।