অক্টোবরে সড়কে মৃত্যুর ৪১.৭৯ শতাংশ মোটসাইকেল দুর্ঘটনায়
চলতি বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশে ৪৪৩টি সড়ক দুর্ঘটনা ৪৬৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় ৮৩৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৭৪ জন নারী ও ৬৬ জন শিশু। মোট ২০৮টি মোটরবাইক দুর্ঘটনায় ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে, যা মোট মৃত্যুর ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ এবং মোটরবাইক দুর্ঘটনার হার ৪৬ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
এ ছাড়া ১০২ জন পথচারী (২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ) এবং ৬৭ জন যানবাহন চালক বা তাদের সহকারী (১৪ দশমিক ২৮ শতাংশ) নিহত হন। এ সময় চারটি নৌ দুর্ঘটনায় সাতজনের মৃত্যু এবং তিনজন আহত হন আর ২১টি রেল দুর্ঘটনায় ১৮ জন মারা যান এবং ছয়জন আহত হন।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সংগঠনটি জানায়, ৯টি জাতীয় দৈনিক, সাতটি অনলাইন সংবাদ পোর্টাল, বিভিন্ন ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং এর নিজস্ব রেকর্ডের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।
যানবাহন অনুযায়ী মৃত্যুর হিসাব
যানবাহনের ধরন অনুযায়ী মৃত্যুর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মোটরবাইক চালক বা যাত্রীদের মধ্যে ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে (৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ)। বাস যাত্রীদের মধ্যে ৩১ জন (৬ দশমিক ৬০ শতাংশ) মারা গেছেন এবং ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ, ট্রলি বা লরির যাত্রীদের মধ্যে ২০ জন (৪ দশমিক ২৬ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
এ ছাড়া প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও অ্যাম্বুলেন্স যাত্রীদের মধ্যে ১২ জন (২ দশমিক ৫৫ শতাংশ) মারা গেছেন, আর তিন চাকার যান (যেমন অটো রিকশা, সিএনজি, টমটম) যাত্রীদের মধ্যে ৯৪ জন (২০ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ) প্রাণ হারিয়েছেন।
নসিমন ও করিমনের মতো স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন দুর্ঘটনা ১০ জন (২ দশমিক ১৩ শতাংশ) এবং সাইকেল চালক ও রিকশা যাত্রীদের মধ্যে চারজন (শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ) নিহত হয়েছেন।
দুর্ঘটনার স্থান অনুযায়ী সড়কের ধরন
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৭৩টি (৩৯ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ) দুর্ঘটনা জাতীয় মহাসড়কে ঘটেছে, ১৬২টি (৩৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে, ৬৪টি (১৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে এবং ৩৮টি (৮ দশমিক ৫৭ শতাংশ) শহুরে এলাকায় এবং এ ছাড়া অন্যান্য অপ্রত্যাশিত স্থানে ছয়টি (১ দশমিক ৩৫ শতাংশ) দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার ধরন
দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ছিল ১১২টি (২৫ দশমিক ২৮ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৭১টি (৩৮ দশমিক ৬০ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১০৪টি (২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ) পথচারীকে আঘাত, ৪২টি (৯ দশমিক ৪৮ শতাংশ) পেছন থেকে ধাক্কা এবং ১৪টি (৩ দশমিক ১৬শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটে।
দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহন
দুর্ঘটনায় জড়িত যানবাহনের মধ্যে ২৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, পিকআপ ভ্যান, ট্র্যাক্টর, ট্রলি, লরি ও ড্রাম ট্রাক জড়িত ছিল। মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, অ্যাম্বুলেন্স ও জিপ দুর্ঘটনা ছিল ৪ দশমিক ৩৯ শতাংশ, যাত্রীবাহী বাস ছিল ১৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মোটরবাইকের ছিল ২৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ এবং তিন চাকার যান (যেমন অটো-রিকশা) ছিল ১৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন ছিল ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, সাইকেল ও রিকশা ছিল ১ দশিক ৮১ শতাংশ এবং অজ্ঞাত যানবাহন ছিল ২ দশমিক ৭১ শতাংশ।
যানবাহনের সংখ্যা
মোট ৭৭৩টি যানবাহন দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। এর মধ্যে ১১২টি বাস, ১১৯টি ট্রাক, ২২টি কাভার্ড ভ্যান, ২৫টি পিকআপ ভ্যান, সাতটি ট্র্যাক্টর, ছয়টি ট্রলি, ৯টি লরি, আটটি ড্রাম ট্রাক, একটি ১৮-চাকার লরি, ১২টি মাইক্রোবাস, ১৪টি প্রাইভেট কার, পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স, তিনটি জিপ, ২১৭টি মোটরবাইক, ১৩৬টি তিন চাকার যান, ৪২টি স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন, ১৪টি সাইকেল বা রিকশা এবং ২১টি অজ্ঞাত যানবাহন।
দুর্ঘটনার সময়
দুর্ঘটনার সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ দুর্ঘটনা হয়েছিল ভোরে, ২৬ দশমিক ৬৩ শতাংশ সকালে, ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ দুপুরে, ১৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ সন্ধ্যা, ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ গোধূলি এবং ২৬ দশমিক ১৮ শতাংশ রাতে।
বিভাগ অনুযায়ী দুর্ঘটনার পরিসংখ্যান
বিভাগীয় পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোট দুর্ঘটনার ২৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর ৩০ দশমিক ৭০ শতাংশ ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। মোট দুর্ঘটনার ১৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ ও মৃত্যুর ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ হয়েছে রাজশাহী বিভাগে। দুর্ঘটনার ১৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ ঘটেছে চট্টগ্রাম বিভাগে। মোট দুর্ঘটনার ৯ শতাংশ ও মৃত্যুর ৮ দশমিক ১০ শতাংশ গয়েঠে খুলনা বিভাগে, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনার ৪ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ থেকে ১০ দশমিক ৮৩ শতাংশ এবং মৃত্যুর ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ হয়েছে।
সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটেছে ঢাকা বিভাগে। এ বিভাগে ১৩১টি ঘটনায় ১৪৪ জন নিহত হয়েছেন। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে সিলেট। সেখানে ২২টি ঘটনা এবং ২৪ জন মারা গেছে। বিভিন্ন জেলা অনুযায়ী, চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ দুর্ঘটনা ও মৃত্যু হয়েছে। সেখানে ৩৪টি দুর্ঘটনায় ৩৯ জন প্রাণ হারিয়েছেন। অপরদিকে, মাগুরা, ঝালকাঠি, বরগুনা ও পঞ্চগড়ে দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি।
রাজধানী ঢাকা শহরে ২৯টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু এবং ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
মৃত্যুর পেশাগত বিশ্লেষণ
প্রকাশিত গণমাধ্যম তথ্য অনুযায়ী, নিহতদের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য, দুইজন আনসার সদস্য, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৯ জন শিক্ষক এবং চারজন সাংবাদিক ছিলেন।
দুর্ঘটনা ও হতাহতের এসব ঘটনা বিবেচনায় নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা উন্নত করতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।