মুক্তি পেলেন মাতৃহারা ১৫ দিনের যমজ শিশুদের বাবা
কারাবন্দি বাবা জামাল মিয়াকে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। তিনি ১৫ দিন বয়সের যমজ মেয়েসহ চার শিশুর বাবা। যমজ মেয়ে শিশু জন্মের পর মায়ের মৃত্যু হয়। এরপর পুলিশ তাঁকে আটক করে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।
আজ বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে জামাল মিয়াকে জামিনে মুক্তি দেন গোপালগঞ্জ জেলা আদালত।
লিগ্যাল এইডের অ্যাডভোকেট শারমিন জাহানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. ফিরোজ মামুন জামাল মিয়ার জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।
আইনজীবী শারমিন জাহান জানান, জামাল মিয়ার ১৫ দিন বয়সের যমজ মেয়ে সন্তানসহ আরও দুটি শিশু সন্তান রয়েছে। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে বিচারক জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন। আজ বিকেলে জামিনের আদেশ জেলা কারাগারে পৌঁছায়। এরপর তিনি জেল থেকে বের হন।
জেল থেকে বের হয়ে জামাল মিয়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করে হয়রানিমূলক এ মামলা থেকে তাঁকে অব্যাহতির দাবি জানান। এরপর তিনি চার শিশু সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে গ্রামের বাড়ি কোটালীপাড়ার উদ্দেশে রওনা হন।
কোটালীপাড়া উপজেলার চিত্রাপাড়ার জামাল মিয়া জানান, কৃষি আর দিনমজুরি করে চলে তাঁর সংসার। সাত বছরের এক মেয়ে ও ১২ বছরের এক ছেলে সন্তানের পর গত ৩০ অক্টোবর তাদের ঘরে আসে যমজ মেয়ে শিশু আনিশা ও তানিশা। টানাপড়েনের মধ্যেও দুই নবজাতকসহ চার সন্তানকে নিয়ে চলছিল তাঁদের সংসার। কিন্তু যমজ বাচ্চা জন্ম নেওয়ার ছয় দিনের মাথায় মারা যান স্ত্রী সাথী বেগম। তাই সংসারে দেখা দেয় অন্ধকারাচ্ছন্নতা। স্ত্রীর হঠাৎ মৃত্যুর শোক কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই দরজায় কড়া নাড়ে আরও এক বিপদ। গত ৮ নভেম্বর গভীর রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে আটক করে কোটালীপাড়া থানা পুলিশ।
পরিবারের অভিযোগ, কোনো অপরাধ ছাড়াই আটক করা জামালকে ছেড়ে দিতে পুলিশ দাবি করে ৫০ হাজার টাকা। টাকা দিতে না পারায় পরে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের ক্রীড়া সম্পাদক শওকত আলী দিদার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয় তাঁকে। এরপর থেকে যমজ নবজাতকসহ চার শিশুর জীবনে নেমে আসে ঘোর অমানিশা। এমন বিপদের দিনে পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে আসছিল।
এদিকে আজ দুপুরে এ ঘটনায় এক নির্দেশনা দেন হাইকোট। ‘এক মাস আগে জন্ম নেয় সাজ্জাদ মোল্লার (১৩) যমজ দুই বোন। তার এক সপ্তাহ পর মারা যান মা। রাজনৈতিক মামলায় কারাবন্দি হন সাজ্জাদের দিনমজুর বাবা জামাল মিয়া। এতে সদ্যোজাত দুই বোনসহ তিন বোনকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে কিশোর সাজ্জাদ। বোনদের মুখে দিতে পারছে না খাবার।’ পত্রিকায় প্রকাশিত এমন খবর নজরে নিয়ে জেলা সমাজসেবা অফিসকে শিশুদের দেখভাল করতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। স্থানীয় সমাজ সেবা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসককে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।