খুলনায় ৫৮ শহীদ পরিবারকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের চেক প্রদান
খুলনায় ৫৮ শহীদ পরিবারকে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তার চেক দেওয়া হয়েছে। আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) সকালে খুলনা জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটরিয়ামে এই আর্থিক সহায়তার চেক দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫৮ শহীদ পরিবারের প্রত্যেককে পাঁচ লাখ টাকা করে মোট দুই কোটি ৯০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. ফিরোজ সরকার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. জুলফিকার আলী হায়দার, অতিরিক্ত রেঞ্জ ডিআইজি মো. হাসানুজ্জামান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক মো. তারিকুল ইসলাম, আশরফা খাতুন ও মো. ওয়াহিদুজ্জামান বক্তব্য দেন। এতে স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে নিজেদের নেতিবাচক ভূমিকায় ইমেজ সংকটে পড়েছে পুলিশ প্রশাসন। এর থেকে উত্তরণের জন্য পুলিশ প্রশাসনকে সুনামের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন কাউকে বিনা কারণে গ্রেপ্তার করা যাবে না। সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে হবে দ্রুত।
সারজিস আলম আরও বলেন, নিহতদের পরিবারের কাছে হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। পুলিশের কাছে তথ্য প্রমাণ থাকলেও তারা সাহস পাচ্ছে না জড়িতদের গ্রেপ্তার করতে। পুলিশ প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের সবাকেই গ্রেপ্তার করা সম্ভব। অথচ মামলার আসামিরা প্রকাশ্যে অনেক জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করলে ছাত্র-জনতা রাজপথে নামবে।
সারজিস আলম আরও বলেন ৩০ জুলাই পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক দল সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে তারা মাঠে নামবে কি না। অথচ শেখ হাসিনার পতনের পর সব কৃতিত্ব তারা নিচ্ছে। তারা বলছে ছাত্রদের এ আন্দোলনে ব্যবহার করা হয়েছে। এসব বক্তব্য অত্যন্ত দুঃখজনক। খুনি হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ যারা অস্ত্র হাতে নিয়ে গণহত্যা চালিয়েছে তাদের বিচার করতে না পারা হবে এই সরকারের ব্যর্থতার প্যারামিটার ।
অনুষ্ঠানে অতিথিরা বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। তারা জীবন দিয়ে নতুন বাংলাদেশ উপহার দিয়ে গেছেন। এ বাংলাদেশ আত্মপ্রত্যয়, দুর্বার ও সাহসের বাংলাদেশ। নতুন বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হবে। এই অভ্যুত্থানের ইতিহাস নতুন বাংলাদেশের ছাত্রজনতার সংগ্রামের ফসল। ছাত্রজনতার আন্দোলনকে একটি মহল অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। অভ্যুত্থানকে বিতর্কিত করার চেষ্টা এখনও চলছে। ছাত্রদের স্পৃহা, মনের আকাঙ্খা আমাদের বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। গত সাড়ে ১৫ বছর সব ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল। আমাদের সমাজ ও বাংলাদেশকে বৈষম্যহীনভাবে গড়ে তুলতে হলে সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ ও আহতদের পরিবারের সদস্য, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তা, জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সদস্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় ও খুলনা জেলার সমন্বয়ক ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।