আমরা অসহায় মানুষের কণ্ঠস্বর হতে চাই : আমার দেশ সম্পাদক
গণমাধ্যমে থেকে জনগণের জন্য কাজ করতে চান দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। আওয়ামী রোষানলে পড়ে বন্ধ হওয়ার প্রায় এক যুগ পর আগামী ২২ ডিসেম্বর পত্রিকাটি ফের বাজারে আসছে। সেই পত্রিকাটির ‘নব অভিযাত্রা’য় মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা অসহায় মানুষের কণ্ঠস্বর হতে চাই।’
আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে দৈনিক আমার দেশের ‘নব অভিযাত্রা’ সংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এক প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘এটা আমার জীবনের লাস্ট ইনিংস, এই ইনিংশ শুধু মিডিয়ার প্রতি উৎসর্গ। এই খেলাটা আমি মিডিয়ার ফিল্ডেই খেলব। আর কোনো ফিল্ডে আমি যাব না। মিডিয়ার ফিল্ডে থেকে আমি জনগণের জন্য কাজ করতে চাই।’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে মাহমুদুর রহমান মহান আল্লাহুর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। এরপর যাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে ফ্যাসিবাদকে বিদায় করা গেছে, তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানান।
২২ ডিসেম্বর বাজারে আসছে আমার দেশ
মাহমুদুর রহমান সর্বশেষ ২০২৪ সালের ৩ অক্টোবর কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন। তিনি বলেন, ‘আপনারা জানেন, একেবারে শূন্য থেকে দুই মাসের মধ্যে একটি জাতীয় পত্রিকা বের করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কিন্তু, আমার মনে জোর ছিল। আমার শহকর্মীদের অক্রান্ত পরিশ্রমের ফলে আল্লাহুর রহমতে আমরা সফল হতে যাচ্ছি। আলহামদুল্লিাহ। ইনশাল্লাহ, আগামী ২২ ডিসেম্বর সকালে আমার দেশ আপনাদের বাসায় ও অফিসে পৌঁছে যাবে।’
জনগণের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করবে আমার দেশ
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, ‘এই যে পুনরায় প্রকাশ, এটা আমাদের এক নতুন যাত্রা। যেহেতু যাত্রা করছি, আমরা জণগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পথ চলতে চাই। আমরা জনগণের প্রত্যাশা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। প্রত্যাশা পূরণের আমরা সর্বত্মক চেষ্টা করব। তবে, আপনাদের কাছে একটা মাস সময় চেয়ে নিচ্ছি। একটা মাস আমাদের ভুল-ত্রুটি আপনারা ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। একটি নতুন পত্রিকা চালু করলে কিছু ভুল-ভ্রান্তি হতে পারে। আশা করছি, এক মাসের মধ্যে আপনাদের চাহিদামতো আমার দেশ উপহার দিতে পারব। যদিও প্রথম দিনেই আমরা চেষ্টা করব একটি মান সম্মত পত্রিকা আপনাদের উপহার দিতে।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘যে কারণে আমার দেশ আজকে একটা ব্রান্ড হিসেবে আর্বিভূত হয়েছে বাংলাদেশে। আমার দেশ একটা ব্রান্ড। আপনি পছন্দ নাও করতে পারেন। অন্যরা পছন্দ করেন। কিন্তু আমার দেশ যে একটা ব্রান্ড, এটা কেউ হয়তো অস্বীকার করতে পারবে না। যারা পছন্দ করবেন না, তারাও অস্বীকার করতে পারবেন না। সেই ব্রান্ড আমরা প্রথমদিন থেকে অক্ষত রাখার চেষ্টা করব।’
সম্পাদকীয় নীতিতে যা থাকছে
সংবাদ সম্মেলনে পত্রিকাটির সম্পাদকীয় নীতি কেমন হবে তা জানিয়েছেন মাহমুদুর রহমান। সম্পাদক বলেন, ‘আমাদের প্রথম উদ্দেশ্য হবে সঠিক খবর দেওয়া। সঠিক খবর সকলের আগে বলব না, যতদূর সম্ভব আগে সঠিক খবর দেওয়া।’ সঠিক খবরের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘সঠিক খবর মানে, আমরা যে খবর দেব; সেখানে উভয় পক্ষের বক্তব্য থাকবে। প্রত্যেকটি খবরে একটা ভুক্তভোগী থাকে, আরেকটা অন্য পক্ষ থাকে। আমার পত্রিকায় খবর সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের কমেন্ট থাকবে। এটা কেন বলছি? আপনারা জানেন, বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদ আমলে তথাকথিত ইসলামি জঙ্গি নিয়ে কী ধরনের প্রচারণা চালানো হতো। বড় বড় পত্রিকায় দেখেছি এক পক্ষের বক্তব্য ছাপানো হতো। পুলিশের পক্ষ থেকে যে বক্তব্য দেওয়া হতো, কেবল তাই প্রচার করা হতো। আমার কাছে সঠিক খবরের ডেফিনেশন হচ্ছে, দুই পক্ষের মন্তব্য দিয়ে যে খবর সেটাই সঠিক খবর।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘আমরা যেমন আগে সংগ্রাম করেছি মানবাধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। এখনও আমার দেশ তাই করে যাবে। আমরা অসহায় মানুষের কণ্ঠস্বর হতে চাই। অসহায় মানুষের জন্য আমার দেশের দরজা সব সময় খোলা। বাংলাদেশের মিডিয়াতে একটা ইসলামফোবিয়া রয়েছে। কেউ হয়তো স্বীকার করতে চাইবেন না। কিন্তু আছে। ১৭৭১ সালের পর থেকে এই অসলামফোবিয়া রয়েছে। মতামত প্রকাশের মাধ্যমে আমরা আমার দেশের ইসলামফোবিয়া মোকাবিলা করব।’
নব্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধেও সোচ্চার থাকবে
আমার দেশ সম্পাদক বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে আমাদের আদর্শিক লড়াই ছিল। এর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। শুধু হাসিনা বা আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ নয়, যেকোনো ধরনের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। যদি আর কেউ হাসিনার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে চাই, তাহলে অবশ্যই আমার দেশ মাথা উচু করে সেই নব্য ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।’
মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশ। অথচ, ফিলিস্তিন ইস্যুতে আমাদের পত্রিকাগুলোতে লেখা কম। দেশের পত্রিকাগুলো ফিলিস্তিন নিয়ে আন্তর্জাতিক পাতায় এক-দুই কলাম রাখে মাত্র। প্রথম পাতায় ফিলিস্তিনের কোনো সংবাদ দেখি না। অথচ, চোখের সামনে এখনও গণহত্যা হচ্ছে। আমাদের পত্রিকায় কাশ্মির মুসলিম নির্যাতন, চীনের উইঘুর মুসলিম নির্যাতন ও রোহিঙ্গা মুসলিমসহ সারাবিশ্বে নির্যাতিত মুসলমানদের নিয়ে লেখা থাকবে।’
যে দল বাংলাদেশের পক্ষে, আমার দেশ তার সঙ্গে
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘ইতিহাস যদি দেখেন, আমরা কোনো রাজনৈতিক দলকে কিন্তু সেই অর্থে সমর্থন করিনি। আমরা অগণতান্ত্রিক ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে ছিলাম। এবং সেটার সুবিধা গেছে তৎকারীণ বিরোধী দলের পক্ষে। যেহেতু সেই সুবিধা তৎকালীন বিরোধীদল বিএনপি পেয়েছে, সেহেতু অনেকের ধারণা রয়েছে; আমরা তাদের সমর্থন করেছি। কিন্তু, আপনারা যদি আমার পত্রিকার আগের কাভারেজ খেয়াল করেন, দেখবেন কোনো কোনো দলকে আমরা এডিশনাল কাভারেজ দিই নাই। এখনো কোনো দলের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্কে নাই। যে দল বাংলাদেশের পক্ষে থাকবে, যে দল আধিপত্যের বিরুদ্ধে থাকবে, যে দল গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, আমরা তাদের পক্ষে থাকব।’
সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ, কবি আবদুল হাই শিকদার ও পত্রিকাটির অনেকে উপস্থিত ছিলেন।