ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টসে হামলা-লুটপাট, চলে যাচ্ছেন চীনের নাগরিকরা
গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আন্দোলনে যোগ না দেওয়ায় চীনের নাগরিকদের মালিকানাধীন ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টেসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় একই এলাকার অন্য কারখানার শ্রমিকরা। এ ঘটনায় আতঙ্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়ে একে একে দেশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন কারখানাটিতে বিনিয়োগকারী চায়নার নাগরিকরা।
গত বুধবার (২২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টায় উপজেলার কামরাঙ্গীরচালা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। আন্দোলনে যোগ না দেওয়ায় অন্য কারখানার শ্রমিকরা এসে সাত চাইনিজ নাগরিকসহ ল্যাভেন্ডারের ৫০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে মারধর করে।
এ ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চীনের নাগরিক ও কারখানা কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ ও কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, গাজীপুরে অবস্থিত চীনা নাগরিকদের মালিকানাধীন ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টসে গত বুধবার সকালে এটিএস অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা হামলা চালায়। এ সময় ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টসের ফটক ভেঙে অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তারা ভাঙচুর চালিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন ও লুটপাট করে। এই হামলার পর ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টসে কর্মরত চীনা নাগরিকরা চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে এবং প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনায় ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এ হামলার পর থেকেই কারখানাটি বন্ধ রয়েছে। আতঙ্কে কারখানাটিতে বিনিয়োগকারী এবং কর্মরত চাইনিজ নাগরিকরা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন।
কোম্পানির হেড টেকনিশিয়ান চাইনিজ নাগরিক মিস উইকি বলেন ‘এটি আমাদের দলের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক এবং দুঃখজনক ঘটনা। আমরা সবসময় স্থানীয় কর্মীদের সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করার চেষ্টা করি এবং বাংলাদেশ সরকারের শ্রম আইন অনুযায়ী সব ধরনের সুবিধা দিয়ে থাকি। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা আমাদের নিরাপত্তার বিষয়ে বড় প্রশ্ন উত্থাপন করেছে।’
মিস উইকি আরও বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে আমাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছি দীর্ঘদিন ধরে এবং সবসময় চেষ্টা করেছি কর্মীদের জন্য একটি সুরক্ষিত ও আরামদায়ক কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে। কিন্তু এই হামলার কারণে আমরা এখন আমাদের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাংলাদেশ থেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে চিন্তা করছি। এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে আমাদের বাংলাদেশে থাকা অসম্ভব হয়ে যাবে।’
ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক সৈয়দ আবু জাফর বলেন, গত বুধবার সকাল সাড়ে ৮টায় এটিএস অ্যাপারেলসের শ্রমিকরা এসে আমাদের কারখানা বন্ধ করার দাবিতে ফটকে হামলা চালায়। আমাদের শ্রমিকরা তা প্রতিহত করে। পরে এটিএস অ্যাপারেলসের কয়েকশ শ্রমিক একত্রিত হয়ে আমাদের কারখানায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় আমাদের সাত চাইনিজ নাগরিকসহ ৫০ জন আহত হন। এরমধ্যে আটজন মারাত্মকভাবে জখম হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় কারখানায় আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমান আড়াই থেকে তিন কোটি টাকা। এখন বড় উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে চীনা বিনিয়োগকারীরা আমাদের দেশ থেকে তাদের বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। যদি চিনা নাগরিকরা বিনিয়োগ তুলে নেন তাহলে আমাদের দেশের জন্য বড় একটি অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটবে।’
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রিয়াদ বলেন, এটিএস অ্যাপারেলসের শ্রমিকদের দ্বারা এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একই সঙ্গে আমরা বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের হাই কমান্ড থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। অনতিবিলম্বে ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।