সাবেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন ৩ দিনের রিমান্ডে
![](https://publisher.ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2025/01/30/panchagarh-former-rall-minister-remand-pic-02.jpg)
পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া আল আমিন নামে এক ইজিবাইকচালককে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগে করা মামলার প্রধান আসামি সাবেক রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনকে তিন দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সাবেক রেলমন্ত্রীকে আদালতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ক্ষুব্ধ লোকজন ভুয়া ভুয়া, ভোট চোর ভোট চোরসহ নানান স্লোগান দেয়। দীর্ঘ এক ঘণ্টা শুনানি চলে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মানিক মিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আদালতের বিচারক নাহিদা আকতার জুলিয়েট মামলার শুনানি শেষে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
নুরুল ইসলাম সুজনকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে নিয়ে আসা হয়।
শুনানিকালে আদালতের উদ্দেশে সাবেক রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, আমি গত ২০ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব্ পালন করছি। আমি দীর্ঘ দিন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলাম, সরকারের সাবেক মন্ত্রী ছিলাম। একইদিনে তিনটি ঘটনায় ঢাকার যাত্রাবাড়ী, ডেমরা ও পঞ্চগড়ের মামলায় আমাকে আসামি করা হচ্ছে। আমি এই ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাকে রাজনৈতিক উদ্দেশে হয়রানি করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে পঞ্চগড়ে যাওয়া-আসাতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আদালতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারের পরিবর্তন না হলে এখানে আসতে হতো না। আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন সুজন।
মামলার শুনানিতে রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আদম সুফি, জিপি অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী, এপিপি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাবীব আল আমিন ফেরদৌসসহ অন্তত ১০ জন অংশগ্রহণ করেন।
আসামী পক্ষের আইনজীবী হিসেবে অ্যাডভোকেট মির্জা সারোয়ার হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি অ্যাডভোকেট আমিনুর রহমান, অ্যাডভোকেট আজিজার রহমান আজু, অ্যাডভোকেট আবু বক্কর সিদ্দিক, অ্যাডভোকেট আলী আসমান বিপুলসহ ১০ থেকে ১৫ জন আইনজীবী অংশ নেন।
আসামী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মির্জা সারোয়ার হোসেন বলেন, এজহার নামীয় আসামি নুরুল ইসলাম সুজনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি ছিল। রিমান্ড আবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ঘটনার সময় সুজন সাহেব মোবাইল ফোনে গুম ও পরে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা শুনানিতে বলেছি বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সেই রেকর্ড বের করা সম্ভব। মামলার বাদী আমাদের একটি এফিডেভিট দিয়েছেন যাতে তিনি বলেছেন, আসামি সুজনকে তিনি ব্যাক্তিগতভাবে চেনেন না। তার সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই বলে উল্লেখ করেছেন। দীর্ঘ শুনানিতে আমরা তার জামিনের আবেদন করেছি। কিন্তু আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আশা করি তিনি ন্যায় বিচার পাবেন।
রাষ্ট্র পক্ষের আইনজীবী এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট আদম সুফি বলেন, এটি রহস্যাবৃত। ভিকটিমের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রহস্য উদঘাটনের জন্য এই মামলায় আসামির রিমান্ড প্রয়োজন ছিল। এটি আদালত অনুধাবন করেছেন বিধায় তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আর আসামি পক্ষ যে এফিডেভিট দেখিয়েছে আদালতে তাতে কোনো সাক্ষীর স্বাক্ষর নেই। এতে প্রতীয়মান হয় যে সেটি সাজানো। আগামী দিনে এই মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশা আল্লাহ।
পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে গত ৪ আগস্ট থেকে গুম হন আল আমিন। এ ঘটনায় আল আমিনের বাবা মনু মিয়া গত ১০ নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনসহ ১৯ জনকে আসামি করে হত্যা ও গুমের মামলা করেন। এ মামলায় আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়।