ক্যাপসিকামে স্বপ্ন বুনছেন একদল কৃষক
কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে উচ্চমূল্যের সবজি ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের অন্তত ৩০ জন কৃষক। চলতি মৌসুমে তাঁরা ইউনিয়নের নিয়ামতবাড়িয়া গ্রামের মাঠপাড়া এলাকায় প্রায় ১০ বিঘা জমিতে ‘ইন্দ্রা গোল্ড ' জাতের বিদেশি এ সবজি চাষ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়ক ঘেঁষে নিয়ামতবাড়িয়া মাঠপাড়া এলাকা। সেখানে চারদিকে জাল দিয়ে ঘিরে মালচিং পদ্ধতিতে ক্যাপসিকাম চাষ করা হয়েছে। সবুজ গাছে ঝুলছে ফল। চার-পাঁচজন করে কৃষক দলবেধে কেউ গাছ থেকে ফল তুলছেন, কেউ পরিষ্কার করছেন। কেউ বা আবার আধুনিক যন্ত্রে পরিমাপ করে প্যাকেটজাত করছেন বাজারে নেওয়ার জন্য।
উপজেলা কৃষি অফিস ও স্থানীয় চাষিদের মাধ্যমে জানা যায়, চাঁদপুর ইউনিয়নে জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতি নামে কৃষকদের একটি সংগঠন রয়েছে। সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু ২০২৪ সালে কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে দুই বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষ করেন। দুই লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ করে তিনি প্রায় চার লাখ টাকা মুনাফা পান। এতে ক্যাপসিকাম চাষে আগ্রহ বাড়ে সমিতির অন্য সদস্যদের মধ্যেও। তাঁদের মধ্যে ৩০ জন নানা বয়সি শিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত কৃষক যশোর অঞ্চলের টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় নিয়ামতবাড়িয়া মাঠপাড়া এলাকায় ১০ বিঘা জমিতে নিরাপদ উচ্চফলনশীল সবজি ‘ইন্দ্রা গোল্ড’ জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করেন। ১২০ দিন জীবনকালের এ সবজির চারা রোপণের ৬০ দিনের মাথায় ফল দেওয়া শুরু হয়েছে।
সমিতির সভাপতি ইলিয়াস হোসেন খসরু জানান, জমির ইজারা, চারা, পরিচর্যাসহ ১০ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে তাঁদের খরচ হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। ইতোমধ্যে প্রায় দুই হাজার কেজি ক্যাপসিকাম তুলেছেন। প্রতি কেজি ক্যাপসিকাম পাইকারি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা দরে তিন লাখ টাকা বিক্রি করেছেন। জমিতে যে পরিমাণ ক্যাপসিকাম হচ্ছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আগামী দুই মাসে আরও অন্তত ১৪ হাজার কেজি উৎপাদনের প্রত্যাশা করছেন তাঁরা। এতে অনায়াসেই ২১ থেকে ২২ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি সম্ভব হবে এবং খরচ বাদে প্রায় ১৪ লাখ টাকা মুনাফা হবে বলে আশাবাদ তাঁদের।
অপরদিকে গাছে ভালো ফল ধরায় এবং লাভজনক চাষ হওয়ায় ক্যাপসিকামে স্বপ্ন বুনছেন এলাকার অন্য কৃষকরাও।
কুমারখালী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, চাঁদপুর ইউনিয়নে কৃষকদের সংগঠন জংগলী আধুনিক কৃষি সমবায় সমিতির একদল কৃষক ক্যাপসিকাম চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন। ১০ বিঘা জমিতে ক্যাপসিকাম চাষে তাঁদের খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, আবহাওয়া অনুকূল থাকলে প্রায় ২৩ থেকে ২৪ লাখ টাকার ক্যাপসিকাম বিক্রি করতে পারবেন তাঁরা। আমাদের কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উচ্চমূল্যের সবজি ও ফসল চাষাবাদে যশোর টেকসই কৃষি সম্প্রসারণ প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের পরামর্শ, উপকরণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
সরকারি প্রণোদনা এবং কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় উচ্চমূল্যের সবজি ক্যাপসিকাম চাষবাদের বিস্তার হোক। এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।