১০ মাসের সন্তান বাড়িতে রেখে ট্রেন চালাচ্ছেন ফরিদা

লালমনিরহাট রেল বিভাগে একমাত্র নারী ট্রেনচালক (এলএম) হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন ফরিদা আক্তার নামের এক নারী। নানা প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালনে অনড় চার সন্তানের জননী ফরিদা আক্তার। মাত্র ১০ মাসের সন্তানকে বাড়িতে রেখে নিয়মিত ট্রেন চালাচ্ছেন তিনি। তার সাহসিকতা আর আত্মবিশ্বাসে মুগ্ধ রেল বিভাগ।
ফরিদা আক্তার স্বামী টুটুলকে নিয়ে লালমনিরহাট রেল স্টেশনের সরকারি কোয়ার্টারে বসবাস করেন। তাদের দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। বাড়ি দিনাজপুর জেলায়। টুটুল লালমনিরহাটে বেসরকারি চাকরি করেন।
ফরিদা আক্তার বলেন, ‘এই কাজটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আমি বেছে নিয়েছি। ছোট থেকে ইচ্ছা ছিল চ্যালেঞ্জিং পেশায় যাব। ২০১৪ সালে ট্রেনচালক হিসেবে রেল বিভাগে যুক্ত হই।’
ফরিদা আক্তার আরও বলেন, ‘পরিবার যদি সাপোর্ট না করে তাহলে আপনি এ পেশায় আসতে পারবেন না। পাশাপাশি একজন পুরুষ ট্রেনচালকেরও সাপোর্ট প্রয়োজন আছে। একজন নারী ট্রেনচালক হিসেবে সমাজে কে কী বলল—সেটা আমি ভাবি না।’
ট্রেনচালক ফরিদা বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। সবচেয়ে ছোট ১০ মাসের মেয়েকে রেখে আমি ট্রেন চালাতে আসি। কাজে বের হলেও তারা কোনোদিন বিরক্ত হয় না।’
লালমনিরহাট রেল স্টেশনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছেন ফরিদা আক্তার। চার সন্তানের মা হয়েও তিনি বেছে নিয়েছেন ট্রেন চালানোর মতো চ্যালেঞ্জিং পেশা। শুরুর দিকে একটু ভয় পেলেও এখন ট্রেনের স্টেশন থেকে স্টেশনে ছুটে চলার এই কাজটিকে ভালোবেসে ফেলেছেন ফরিদা। ২০১৪ সালে চাকরিতে যোগ দিয়ে এরপর ১০ বছরের বেশি সময় অতিক্রম করে ফেলেছেন এই নারী।

নারী হওয়ায় দায়িত্ব পালনে তাকে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়, কিন্তু সেসব নিয়ে কখনও দমে যাননি ফরিদা। ট্রেনের যান্ত্রিক ত্রুটি হলে নিজেই তা সমাধানের সাহস দেখান বলে জানান তিনি। তার এই সাহসিকতা ও পেশাদারত্বে মুগ্ধ রেল কর্তৃপক্ষ।
লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় লোকো ইনচার্জ কাজী সুমন বলেন, ‘নারীরা এখন আর ঘরের মধ্যে বন্দি নেই। তারা সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। নারী চালকদের কাজে কোনো গাফিলতি নেই। ফরিদার মতো নারীরা দেখিয়ে দিচ্ছেন, কোনো পেশাই নারীদের জন্য অসম্ভব নয়।’