খাগড়াছড়ির জেলারকে বিশেষ নিরাপত্তায় উদ্ধার : দায়িত্ব হস্তান্তর
খাগড়াছড়ি কারাগারের জেলার আকতার হোসেন শেখ বিকেল আজ বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে বিশেষ নিরাপত্তা প্রহরায় কারাগার থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে কারাগারের ফটকে তাঁকে আটক রেখেছিলেন কারারক্ষীরা।
অনৈতিকভাবে তিন কারারক্ষীকে বদলিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে দুপুর ২টা থেকে জেলার আকতার হোসেন শেখকে জেল থেকে বের হতে না দিয়ে কারা ফটকে আটকে রেখে আন্দোলন শুরু করেন কারারক্ষীরা।
কারারক্ষীরা তাদের হয়রানিমূলক বদলির জন্য জেলার আক্তার হোসেনকে দায়ী করে বদলির আদেশ প্রত্যাহার এবং তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে তা প্রমাণ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এ ঘটনার খবর জানাজানি হলে কারাগারের সামনে গণমাধ্যম কর্মীসহ উৎসুক মানুষ ও আইন শৃঙ্লাবাহিনীর ভিড় জমে যায়।
খবর পেয়ে দুপুর আড়াইটার দিকে ভারপ্রাপ্ত জেল সুপার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিন মিয়া কারাগারে ছুটে আসেন। তিনি আন্দোলনরত কারারক্সীদের ডিউটি থেকে সরিয়ে দিয়ে অস্ত্র জমা নিয়ে নেন।
এরপর বিকেল ৪টার দিকে জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে খাগড়াছড়ি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ আন্দোলনরত কারারক্ষীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে চেষ্টা করেন। আন্দোলনরত কারারক্ষীদের সঙ্গে তাঁদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে জানতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে বৈঠক করেন। এ সময় জেলা সদরের সাম্প্রতিক সময়ে কারামুক্ত এবং এ জেলারের হাতে নিগৃহিত অনেকে তাদের অভিযোগ জানাতে ভিড় জমায়। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাদের কোনো অভিযোগ থাকলে লিখিতভাবে জানানোর পরামর্শ দেন।
নবাগত ডেপুটি জেলার মঞ্জুরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, সকাল থেকে জেলার আকতার হোসেন শেখ বদলিজনিত কারণে কারাগারের দায়িত্ব হস্তান্তরের কাজ করছিলেন। হঠাৎ দুপুরের দিকে কারা ফটকে কয়েকজন কারারক্ষী আন্দোলন শুরু করেন। বিকেলে তিনি দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
কারারক্ষীদের একটি সূত্র জানায়, সকালে কারা অভ্যন্তরে জেলার বন্দিদের ধাওয়া খেয়েছেন আক্তার হোসেন মেখ। এ সময় কারারক্ষীরা তাকে রক্ষা করেন। বিকেল ৫টা ২০ মিনিটে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হাসান মারুফ, সদর থানার ওসি আব্দুল বাতেন মৃধা, জেল সুপার, ডেপুটি জেলার সভাস্থল থেকে বের হয়ে এলেও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। ঘটনাটিকে জেলারের সঙ্গে কয়েদিদের ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, কারা রক্ষীদের লিখিতভাবে অভিযোগ দিতে বলেছেন। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বরাবরে পাঠাবেন। এর কয়েক মিনিট পর বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে জেলার বিশেষ নিরাপত্তা প্রহরায় কারাগার ত্যাগ করেন আক্তার হোসেন। বারবার চেষ্টা করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি এবং তিনি গাড়ির কাচ তুলে কারাগার এলাকা ত্যাগ করেন।
আক্তার হোসেনের নানা অনিয়ম ও দুনীতির বিষয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি উচ্চ পযায়ের একটি তদন্ত কমিটি খাগড়াছড়ি কারাগারে আসে। কারারক্ষী, কারাবন্দিদের সঙ্গে কথা বলে। তদন্তের পর গত ১১ ফেব্রুয়ারি জেলারকে শাস্তিমূলক বদলি হিসেবে চট্টগ্রাম কারাগারে সংযুক্ত করা হয়েছে।