নাব্যতা হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে নেত্রকোনার মগড়া নদী

নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে মগড়া নদী। একসময় এই নদীর পানি কানায় কানায় পূর্ণ ছিল। তবে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী। দুই প্রান্তের পানি শুকিয়ে গেছে। হাঁটু পানিও নেই মাঝ নদীতে। নাব্যতা হারিয়ে আবর্জনা আর বালুর স্তূপে অস্তিত্ব হারাচ্ছে জলজ প্রাণী ও মানুষের জীবিকা এই নদী।
ধলাই নদী নামে প্রবাহিত হয়ে পূর্বধলার হোগলা বাজারের পাশ দিয়ে পূর্বধলা সদর অতিক্রম করে ত্রিমোহনীতে এসে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়েছে। এখান থেকেই এটি মগড়া নামে পরিচিত। নদীটি প্রথমে পাঁচ মাইল দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে দয়াগঞ্জ ঘাটের পর পূর্বদিকে বাঁক নিয়েছে এবং নেত্রকোনা শহর, আটপাড়া, মদন হয়ে ধনু নদীতে মিলেছে।
বর্তমানে পলি জমে নদী তার প্রস্থ হারিয়েছে, শুকিয়ে যাচ্ছে। আর সেই সুযোগে দখলদাররা নদীর বুকেই চাষাবাদ শুরু করেছে। নদীর বিভিন্ন অংশে এখন ফসলের চারা রোপণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও বিশাল চর জেগেছে, আবার কোথাও সামান্য হাঁটু পানি টিকে আছে। নদীর ওপরের অংশে ধানের বীজতলা বসানো হয়েছে, যা দেখে বোঝাই মুশকিল যে এটি এককালে প্রবহমান নদী ছিল। মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর বিলুপ্তির ফলে প্রভাব পড়েছে স্থানীয় অর্থনীতিতেও।
বানিয়াজান গ্রামের কৃষক একলাছ মিয়া জানান, ‘নদীতে পানি না থাকায় আমরা সেচের পানি পাচ্ছি না। গৃহস্থালির কাজেও পানি পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। মাছ ধরার সুযোগও নেই, ফলে আমাদের গ্রামবাসী কঠিন সংকটে পড়েছে।’
আটপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ বলেন, ‘আগে এই নদীপথে লঞ্চ, কার্গো, ট্রলার চলত। কয়েক বছর আগেও বিভিন্ন উপজেলার সঙ্গে নৌপথে যোগাযোগ ছিল। কিন্তু এখন নদী বিলীনের পথে, নৌপথ বলতে কিছু নেই।’
নদী শুকিয়ে যাওয়ায় সবচেয়ে বিপদে পড়েছে জেলে সম্প্রদায়। স্থানীয় জেলে সালাম মিয়া বলেন, ‘আগে মগড়া নদীতে জাল ফেললেই মাছ উঠত। কিন্তু এখন নদী শুকিয়ে যাওয়ায় আমরা বেকার হয়ে গেছি।’
স্থানীয়দের আশঙ্কা, অবিলম্বে খনন করা না হলে মগড়া নদীর অস্তিত্বই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
আটপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুয়েল সাংমা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন পাঠাব, যাতে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’