এবারও ভাষা মতিনের গ্রামে কলাগাছের তৈরি শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা

ভাষা আন্দোলনের অন্যতম আহ্বায়ক আব্দুল মতিন। অবিষ্মরণীয় এই লড়াকুর জন্মস্থান সিরাজগঞ্জের চৌহালীর যমুনা চরাঞ্চলে। সেখানে নেই কোনো শহীদ মিনার। তাই প্রতিবছর শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এলে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কলাগাছ দিয়ে তৈরি করেন শহীদ মিনার, জানান ভাষা শহীদদের প্রতি ফুলেল শ্রদ্ধা।
এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি। আজ শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভাষা মতিনের গ্রাম শৈলজানা নিম্নমাধ্যমিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরি কলাগাছের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিবসটির কর্মসূচি শুরু করে।
স্কুলের শিক্ষার্থীরা কলাগাছ দিয়ে শহীদ মিনার ও স্কুলের বেঞ্চ দিয়ে বেদি তৈরি করে। চারপাশ রঙিন কাগজ দিয়ে সাজায়। তারপর একে একে শ্রদ্ধা জানায় শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা।
ভাষা মতিন এখনও মানুষের হৃদয়ে বেঁচে আছেন। তার লড়াকু জীবনের প্রতি সম্মান জানাতে গ্রামে অন্তত একটি শহীদ মিনার সরকারের পক্ষ থেকে করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন এলাকাবাসী। নানা বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভাষা মতিনের কর্ম ও চিন্তা নিয়ে গবেষক হান্নান মোর্শেদ রতন। তিনি জানান, মাতৃভাষা বাংলার জন্য জীবনবাজি রাখা বীরপুরুষ তার গ্রামেই অবহেলিত। এর চেয়ে লজ্জা আর কিছুই নেই। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকার উন্নয়ন না করলেও আশা করি বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্তরা বিশেষ নজর দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, পাঠাগারসহ নানা উন্নয়নে তার নামকরণ করবে।
স্থানীয়রা জানান, ভাষা সৈনিক আব্দুল মতিনের স্মরণে জন্মভূমি এলাকার চাঁন্দইর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে ২০১০ সালের দিকে বেসরকারি এনজিওর অর্থায়নে একটি শহীদ মিনার ও পাঠাগার নির্মাণ করা হয়। সেখানেই প্রতি বছর একুশে ফেব্রুয়ারিতে নানা আয়োজনে শ্রদ্ধা জানাত যমুনার চরাঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীসহ সর্বস্তরের মানুষ। তবে, ২০১৪ সালে যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়ে যায় শহীদ মিনার ও বিদ্যালয় ভবন। পাঁচ বছর পর একই চরের শৈলজানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে যমুনার ভাঙনে সেটিও বিলীন হয়ে যায়। এজন্য কয়েক বছর ধরে আবারও বাঁশ ও কলা গাছ দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিবসটি পালন করা হয়। উপজেলা প্রশাসন বা কোনো জনপ্রতিনিধি–রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে কোনো খোঁজ নেওয়া হয় না।
শৈলজানা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মাসুদ রানা জানান, অবহেলিত চর এলাকায় অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই। এজন্য এলাকার শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে বাড়ির উঠানে শহীদ মিনার তৈরি করে শহীদ দিবস পালন করছে। সারাদেশে দৃষ্টি নন্দন শহীদ মিনার থাকলেও ভাষা মতিনের এলাকায় বরাবরই অবহেলিতই রয়ে গেল।
চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) জুয়েল মিয়া এনটিভি অনলাইনকে জানান, ভাষা মতিনের এলাকায় শহীদ মিনার নির্মাণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার স্মরণে উপজেলা সম্মেলন কক্ষকে নামকরণের চিন্তা করেছি। নিয়ম মেনে আশা করছি দ্রুত আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করা হবে।