ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী-শ্যালিকাকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামী পলাতক

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় স্ত্রী ও শ্যালিকাকে শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী মো. সামিউলের বিরুদ্ধে। গতকাল রোববার (২ মার্চ) দিনগত রাতে কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নের ধজনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল কাদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নিহতরা হলেন—সামিউলের স্ত্রী জ্যোতি আক্তার (২০) ও শ্যালিকা সৃতি আক্তার (১৪)। সৃতি আক্তার জয়নগর লিয়াকত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
সামিউল কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার জামতলী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি পেশায় মিল শ্রমিক। হত্যাকাণ্ডের পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন।
নিহত জ্যোতি আক্তার ও সৃতি আক্তারের ছোট ভাই পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া জাহিদ বলে, ‘গতকাল (রোববার) আমার বোনজামাই এবং আমার দুইবোনসহ আমি ইফতার করেছি। রাতে খাওয়ার পর শুয়েছিলাম। প্রতিদিন আমার বোন সৃতি ও আমি একসঙ্গে ঘুমালেও গতকাল (রোববার) রাতে আমার বোনজামাই আমাকে আলাদা রুমে তার সঙ্গে ঘুমাতে বলে। তখন রাত আনুমানিক ১১টা-১২টা হবে। এরপর সাহরির সময় আমার বোনজামাই জানায়, আমার বোনেরা রোজা রাখবে না। পরে আমি শুয়ে পরলে সকালে উঠে দেখি ঘরের পেছনের দরজা খোলা। আমার বোনজামাই নেই এবং আমাদের ঘরে থাকা স্বর্ণ ও মোবাইল ফোনও নেই। তখন আমার বোনদের ডাকতে গেলে তারা না ওঠায় আমি আশপাশের লোকদের ডেকে আনি।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সকালে নিহতদের ছোটভাই জাহিদের চিৎকার শোনে তারা এসে দেখেন জ্যোতি ও সৃতির মরদেহ বিছানায় পড়ে আছে। এরপর আশপাশের লোকজন মিলে কসবা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে।

পাশের গ্রামের বাসিন্দা এবং সম্পর্কে নিহতদের মামাতো ভাই মহসিন বলেন, ‘জ্যোতি ও সৃতি আপন বোন। তারা সম্পর্কে আমার মামাতো বোন হয়। জ্যোতির স্বামী সামিউল গত এক সপ্তাহ ধরে আমার মামার বাড়িতে থাকছে। আজ সকালে (সোমবার) ফোন পেয়ে এসে দেখি আমার মামাতো বোনদের হত্যা করা হয়েছে। আমার ধারণা জ্যোতির স্বামীই এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। এর জন্যই তিনি পালিয়ে গেছেন।’
প্রতিবেশী জিয়াউর রহমান বলেন, ‘নিহত জ্যোতি ও সৃতি সম্পর্কে আমার ভাতিজি। আজ সকালে (সোমবার) তাদের ছোট ভাইয়ের চিৎকার শুনে আমরা এসে দেখি মরদেহ পড়ে আছে। গতকাল (রোববার) জ্যোতির জামাই সামিউল তাদের ঘরে ছিল। তবে এখন তিনি পলাতক। তাই আমাদের ধারণা, জ্যোতির জামাই তাদের হত্যা করেছে।’
স্থানীয় সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য নারগিস আক্তার বলেন, ‘ঘটনাটি জানাজানি হলে আমরা ঘটনাস্থলে এসে দুইবোনের মরদেহ দেখতে পাই। তাদের ছোটভাইয়ের থেকে জানতে পারি, বোনজামাই সামিউল তার বোনদের হত্যা করেছে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের ফাঁসির দাবি করছি।’
কসবা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবদুল কাদের বলেন, ‘আপন দুইবোনকে হত্যার খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করেছি। মরদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে। প্রাথমিকভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করছি। তবে প্রকৃত মৃত্যুর কারণ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসলেই জানা যাবে। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।’