বীরগঞ্জে বেড়েছে ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজ বীজের আবাদ

এ বছর ‘কালো সোনা’ খ্যাত পেঁয়াজ বীজের বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা করছেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা। পেঁয়াজের সাদা অংশ শুকিয়ে বের হয় কালো বীজ, যার বাজারদর আকাশছোঁয়া। তাই এ বীজকে বলা হয় ‘কালো সোনা’। দিনে দিনে পেঁয়াজ বীজের আবাদ বেড়েছে উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে। এই ফসল চাষে লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে ঝুঁকছেন অনেকেই। সারা দেশে পেঁয়াজ বীজের চাহিদার ৪০ শতাংশ জোগান আসে এ উপজেলা থেকে। কৃষকরা এবার ভালো ফলন ও দাম পাওয়ার আশায় বুক বেঁধেছেন। তাই পেঁয়াজ বীজের গাছ পরিচর্যা করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তারা।
সরজমিনে উপজেলার পলাশবাড়ী, শিবরামপুর ও পাল্টাপুর ইউনিয়ন ঘুরে দেখা যায়, এই উপজেলার উৎপাদিত পেঁয়াজ বীজ গুণমানে অন্যতম। তাই এখানকার পেঁয়াজ বীজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এরই মধ্যে পেঁয়াজ বীজ আবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন এমদাদুল, বাতেন, মাসুম, শহিদুল ইসলাম ও নুরুল ইসলামসহ স্থানীয় অনেক কৃষক। এতে করে তাদের সংসারে আর্থিক সচ্ছলতা ফিরেছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫০ হেক্টর জমিতে। অর্জন হয়েছে ১৫১ হেক্টর জমিতে। বীজের আবাদ হয়েছে ৮ হেক্টরের বেশি জমিতে।
উপজেলার বরবাড়ী গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান, জমি চাষ, বীজ, রোপণ খরচ, সার ও কীটনাশক, সেচ, নিড়ানি, বাঁশ, সুতলিসহ এবার প্রতি বিঘায় খরচ দাঁড়াবে এক লাখ টাকা। তিনি আশা করছেন, প্রতি বিঘায় ২২ থেকে ২৪ কেজি বীজ পাবেন। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বীজ সর্বনিম্ন দেড় হাজার টাকা দরে বিক্রি করতে পারেন। তাদের ৩ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ বীজ রয়েছে।
একই এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের উৎপাদিত বীজের মান ভালো। নিজের উৎপাদিত বীজে চারা প্রস্তুত করে পরীক্ষামূলক ৪ বিঘা জমিতে পেঁয়াজ লাগিয়েছি। আমরা পুরো দেশে এ বীজ ছড়িয়ে দিতে চাই। প্রত্যেক কৃষক যদি অল্প জমিতে নিজেরাই পেঁয়াজ চাষাবাদ করেন, আমাদের ঘাটতি অনেকটাই কমে আসবে।’
ডাঙ্গারহাট গ্রামের কৃষক এমদাদুল ইসলাম জানান, পেঁয়াজ বীজের ক্ষেত দেখতে আসছেন অনেক কৃষক। কেউ কেউ আগাম পেঁয়াজ বীজ কেনার কথা বলে রেখেছেন।
উপজেলার পলাশবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান মো. মোস্তাক আহমেদ সিদ্দিকী মানিক বলেন, ‘এ বছর ব্যাপক পেঁয়াজ বীজ আবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। আগামী বছর এ ইউনিয়নে কৃষকদের নিজস্ব পেঁয়াজ বীজে পেঁয়াজ চাষ ব্যাপক হারে বৃদ্ধির সম্ভবনা রয়েছে।’
বীরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘উপজেলায় পেঁয়াজ বীজ উৎপাদনে কৃষক নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। কৃষি বিভাগ নিয়মিতভাবে পরামর্শ প্রদান করছে। কৃষক উৎপাদিত বীজ প্যাকেট জাত করে সিড সার্টিফিকেশনের মাধ্যমে বীজ ব্যবস্থাপনা ও বিপণনে বেশ ভালো ভূমিকা পালন করছে।’