করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করার সুপারিশ সিপিডির

উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়ে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে চার লাখ টাকা নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, রাজস্ব ও ব্যয় সম্পর্কিত উভয় পদক্ষেপের ক্ষেত্রেই সীমিত আয়, সুবিধাবঞ্চিত ও দুর্বল গোষ্ঠীগুলোকে সহায়তা করা আগামী দিনগুলোতে রাজস্ব ব্যবস্থাপনার একটি প্রাথমিক অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
আজ রোববার (১৬ মার্চ) রাজধানীর ধানমণ্ডিতে সিপিডি কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন এসব কথা বলেন। জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের সময় মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা ছিল তাদের প্রধান অর্থনৈতিক অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি সময়ে জাতীয়, গ্রামীণ ও শহর পর্যায়ে সাধারণ মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশেরও বেশি ছিল। শহর ও গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সাধারণত খাদ্য বহির্ভূত মল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি ছিল। গড়ে গ্রামীণ অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি শহরাঞ্চলের তুলনায় বেশি ছিল।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, মুল্যস্ফীতি মোকাবিলায় সরকার ভর্তুকিযুক্ত প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড বিতরণ এবং সুপারমার্কেটের কেনাকাটার ওপর ভ্যাট হ্রাস করার মতো পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করেছে। তবে, পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতা, সরবরাহ শৃঙ্খলের অনিয়ম ও অপর্যাপ্ত বাজার পর্যবেক্ষণের মতো কাঠামোগত সমস্যার কারণে এই প্রচেষ্টাগুলো কেবল আংশিকভাবে সফল হয়েছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থবছর ২০২৫-২৬ এর জাতীয় বাজেট উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব বহন করে। একটি চ্যালেঞ্জিং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বাজেট প্রণয়ন করছে।
ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে উচ্চ মুল্যস্ফীতি, রাজস্ব আদায়ে দুর্বলতা, বাজেট বাস্তবায়নে ধীরগতি, ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাসের বৈশিষ্ট্যযুক্ত অর্থনীতি পেয়েছিল। রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহের নিম্ন গতি অর্থনৈতিক দুর্বলতাগুলোকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধার নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রধান উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত গোষ্ঠীর সুরক্ষা ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। আসন্ন জাতীয় বাজেট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে যাওয়ার, স্বল্পমেয়াদী সংশোধনমূলক ব্যবস্থা বাস্তবায়নের ও সম্পদ সংগ্রহ, সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনা ও ব্যয় দক্ষতার ক্ষেত্রে মধ্যমেয়াদী সংস্কারের ভিত্তি স্থাপনের একটি অনন্য সুযোগ উপস্থাপন করছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, এই প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হবে একটি বিশ্বাসযোগ্য ও সুগঠিত আর্থিক কাঠামো তৈরি করা।