ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিল করলেও রপ্তানি কমবে না : বাণিজ্য উপদেষ্টা
ভারত ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করলেও বাংলাদেশের রপ্তানি কমবে না বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দীন। আজ বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় আয়োজিত ‘মিট বাংলাদেশ এক্সপোজিশন’ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন উপদেষ্টা।
বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত—লেদার, ফুটওয়্যার, এমপিপিই, প্লাস্টিক ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য প্রদর্শনের লক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসিফোরজে প্রকল্পের আয়োজনে চলছে এ প্রদর্শনী। দুই দিনব্যাপী (২৪ ও ২৫ এপ্রিল) প্রদর্শনী চলবে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, নিজেদের সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে খরচ কমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে দেশের ব্যবসায়ীদের রপ্তানি খরচ আরও কমে যাবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, একই সঙ্গে দেশের ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগ আনার প্রক্রিয়া সহজ করতে সব ধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এর মধ্যে ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইনডো চালুসহ বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সমস্যা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য সহযোগী অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনার পথ খোলা আছে। যেকোনো সমস্যা সমাধান করা হবে।
এ সময় একক রপ্তানি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনতে আহ্বান জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের রপ্তানি পণ্যের বহুমুখীকরণ এখন সময়ের দাবি। শুধু কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর নির্ভর করে টিকে থাকা সম্ভব নয়। বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে উদ্ভাবনে যেতে হবে, নতুন বাজার খুঁজতে হবে।’
অনুষ্ঠানে ইসিফোরজে প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. আব্দুর রহিম খানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বিশ্বব্যাংকের (ঢাকা অফিস) সিনিয়র অপারেশন অফিসার ও ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর সুহাইল কাসিম এবং সিনিয়র প্রাইভেট সেক্টর স্পেশালিস্ট হোসনা ফেরদৌস সুমি; সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ের আল নোকবা গ্রুপের চেয়ারম্যান ও সিইও সুলতান এম. আলবিশি এবং বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইসিফোরজে প্রকল্পের উপপরিচালক (যুগ্ম সচিব) শেখ মোহাম্মদ আব্দুর রহমান।
বিশ্ব ব্যাংক রপ্তানি বৃদ্ধিসহ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিসহ অন্যান্য সুযোগ তৈরি বহুমুখীকরণে সহায়তা করছে উল্লেখ করে সুহাইল কাসিম বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণ হয়ে গেলে বাংলাদেশে বিদেশি সহায়তা কমে যাবে। তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে আরও শক্তিশালী হতে হবে। দেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ও প্রযুক্তি উন্নয়নে আরও মনোযোগী হতে হবে।
বিপিজিএমইএর সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, দেশের তৈরি পোশাকশিল্প প্রধান রপ্তানি পণ্য হলেও অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি নিয়েও ভাবতে হবে। দেশের জিডিপিতে ৩০ শতাংশ অবদান রাখে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো।
আন্তর্জাতিক এ প্রদর্শনীতে ১২০টিরও বেশি কোম্পানি তাদের পণ্য প্রদর্শন করছে। সিঙ্গাপুর, লিবিয়া, কলম্বিয়া, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইন্ডিয়া, ভুটান, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়াসহ ৯টির অধিক দেশের ২৫টিরও বেশি আন্তর্জাতিক সোর্সিং এজেন্ট ও ক্রেতা, এক হাজারেরও বেশি স্থানীয় ক্রেতা এবং ১২০টিরও বেশি বাংলাদেশি উৎপাদনকারী কোম্পানি পরস্পরের মধ্যে বি-টু-বি (বিজনেস-টু-বিজনেস) সংযোগ স্থাপন ও নেটওয়ার্কিংয়ের সুযোগ মিলছে। বাংলাদেশি উৎপাদনকারীরা সরাসরি আন্তর্জাতিক ক্রেতা, সোর্সিং এজেন্ট, বিনিয়োগকারী ও খাতসংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে ব্যবসার প্রসারে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
প্রদর্শনীতে আরও থাকছে—সেক্টরভিত্তিক ব্রেকআউট সেশন, কর্মশালা, ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট ও ব্যবসায়ী নেতাদের অংশগ্রহণে আলোচনা সভা। প্রদর্শনী শেষে, আন্তর্জাতিক সোর্সিং এজেন্ট ও ক্রেতারা বাংলাদেশি উৎপাদনকারী বিভিন্ন শিল্প কারখানা পরিদর্শন করবেন।
আয়োজকরা জানান, ইসিফোরজে প্রকল্পের মাধ্যমে তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের বাইরে বাংলাদেশ সরকারের রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের নীতিগত লক্ষ্য অর্জনে প্রকল্পটি প্রত্যক্ষভাবে অবদান রাখছে। একই সঙ্গে, সংশ্লিষ্ট খাতের প্রতিযোগিতামূলক সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দেশের রপ্তানি আয় ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত হবে এবং দেশের অভ্যন্তরে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা মোকাবিলায় প্রকল্পের উদ্যোগসমূহ সহায়ক হবে বলেও আয়োজকেরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ইসিফোরজে প্রকল্প মিট বাংলাদেশ সোর্সিং শো (এমবিএস)-এর মাধ্যমে লেদার, ফুটওয়্যার, এমপিপিই, প্লাস্টিক এবং লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য সম্পর্কিত শিল্প খাতের উৎপাদনকারী নিয়ে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যে চারটি আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে। এমপিপিই পণ্য নিয়ে জাপানে ৯-১১ এপ্রিল ২০২৫, ‘জাপান মেডটেক’; লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য নিয়ে সিঙ্গাপুরে ১৩-১৬ মার্চ ২০২৫, ‘কমেক্স আইটিশো’; প্লাস্টিক পণ্য নিয়ে তুর্কিয়েতে ২৫-২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ‘ইস্তাম্বুল টয় ফেয়ার’ এবং লেদার ও ফুটওয়্যার পণ্য নিয়ে মিশরে ২৩-২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ‘১৯তম কায়রো ইন্টার লেদার’ প্রদর্শনীগুলোতে অংশগ্রহণ করে।