জনগণ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ একটি মহান বাধ্যতামূলক সামাজিক চুক্তি হিসাবে বর্ণনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, কোনো দল এটি অমান্য করার সাহস করবে না, কারণ এটি একটি স্বচ্ছ জাতীয় সংলাপের মাধ্যমে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং পরবর্তী সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।

বুধবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন (এনসিসি) আয়োজিত দ্বিতীয় দফা সংলাপের ২২তম অধিবেশনে চা বিরতির সময় সালাহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দল কি এটি ভঙ্গ করার সাহস করবে? কোনো দল কি সেই ঝুঁকি নেবে? আমি মনে করি না এর চেয়ে বড় ঐকমত্য, সমঝোতা স্মারক বা সামাজিক যোগাযোগ বা চুক্তি হতে পারে। এটি জাতি, জনগণ, রাজনৈতিক দল এবং সব অংশীদারদের মধ্যে একটি চুক্তি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এটি বাস্তবায়নের একমাত্র স্থান হলো জাতীয় সংসদ।’

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সনদের তাৎক্ষণিক বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য একটি আইনি কাঠামোর দাবির বিষয়ে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সালাহউদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেন।

বিএনপিনেতা সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, এটি একটি আইনি দলিল হওয়া উচিত। আমি বলব, এই পুরো প্রক্রিয়াটি—দীর্ঘ, স্বচ্ছ, সরাসরি সম্প্রচারিত আলোচনায় অনেক রাজনৈতিক দলকে জড়িত করা—একটি উন্মুক্ত আদালতের বিচারের মতো। জাতি দেখেছে কে কী বলেছে। এখন যখন প্রধান উপদেষ্টা, সংস্কার কমিশনের প্রধান, এনসিসির সদস্য, জাতীয় নেতা এবং সব দলের প্রতিনিধিদের সই নিয়ে একটি সনদ প্রস্তুত করা হয় এবং এটি অনলাইনে ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়—তখন কি কোনো দল এটি লঙ্ঘনের সাহস করতে পারে? আমি তা মনে করি না।’

সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘জুলাই-আগস্ট ছাত্র অভ্যুত্থানের পর সনদ জাতির সম্মিলিত চেতনাকে প্রতিফলিত করে। কোনো রাজনৈতিক দল কি জাতির আকাঙ্ক্ষা এবং ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক নেতাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি কি উপেক্ষা করতে পারে? আমি বিশ্বাস করি না যে এটি সম্ভব।’  

সালাহউদ্দিন আহমেদ জোর দিয়ে বলেন, বিএনপি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করেছে এবং সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা উচিত সে বিষয়ে এনসিসির প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, জাতীয় সংসদই এই সনদ বাস্তবায়নের একমাত্র স্থান।’

বিএনপির এই নেতা আরও উল্লেখ করেন, সনদের একটি ধারা স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে—সংসদ গঠনের দুই বছরের মধ্যে সম্মত প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে হবে। আমরা সেই অনুভূতি ও প্রস্তাবের সঙ্গে শতভাগ একমত।

সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সনদ সই হওয়ার আগেই অধ্যাদেশ এবং উপদেষ্টা পর্যায়ের পদক্ষেপের মাধ্যমে অনেক সংস্কার বাস্তবায়ন শুরু হয়ে গেছে।

বিএনপি সংস্কার গ্রহণ করে না এমন অভিযোগের বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কমিশনের মোট ৮২৬টি প্রস্তাবের মধ্যে আমরা মাত্র ৫১টির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছি। এত বিশাল ঐকমত্য গঠনের প্রক্রিয়ার পরে কেউ কীভাবে বলতে পারে, বিএনপি সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়?’