পদ্মা গিলছে বসতবাড়ি, ঝুঁকিতে ৮০০ পরিবার
 
শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে পদ্মা নদীতে আবারও ভয়াবহ ভাঙন দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সকালে মঙ্গল মাঝিরঘাট-সাত্তার মাদবর হাট বাজার সংলগ্ন অছিমদ্দিন মাদবর কান্দি এলাকায় ১১০ মিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে ১৭টি বসতবাড়ি সম্পূর্ণভাবে পদ্মায় হারিয়ে গেছে এবং নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে আরও শতাধিক ঘরবাড়ি।
জুন মাস থেকে এ পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা সংলগ্ন অন্তত সাড়ে ৭০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। জাজিরা উপজেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, ৭২টি বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়েছে এবং আতঙ্কে শতাধিক পরিবার আগেই ঘরবাড়ি সরিয়ে ফেলেছে। বর্তমানে সাত্তার মাদবর বাজার এলাকার প্রায় ২৫০টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং আশপাশের গ্রামগুলোর অন্তত ৮০০ পরিবার রয়েছে চরম ঝুঁকির মধ্যে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, পদ্মা সেতুর দক্ষিণ প্রান্ত জাজিরার নাওডোবা এলাকা থেকে শুরু হওয়ায় এখানে নির্মিত হয়েছে সেতুর সার্ভিস এরিয়া-২, সেনানিবাস, থানা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো। নদীভাঙন রোধে ২০১২ সালে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণ করে সেতু কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে যা নদীশাসনের অংশ হিসেবে যুক্ত হয়।
গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া ভাঙন চলতি বছরেও থামেনি। সর্বশেষ ৩১ জুলাইয়ের ভাঙনের আগে ৭ জুন, ৭ জুলাই, ৯ জুলাই ও ২৩ জুলাই ধারাবাহিকভাবে ভেঙেছে আরও কয়েকশ মিটার এলাকা। ভাঙন রোধে আপাতত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা কার্যকর প্রতিরোধ করতে পারছে না।
স্থানীয় ভিটেমাটি হারানো ময়না আক্তার বলেন, ‘দিনের পর দিন নদী ভাঙনে সব হারিয়ে ফেলেছি। এখন আমাগো ভিটাও গেল। সরকার শুধু আশ্বাস দেয়, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না। এখন আমরা কই যামু?’
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগেভাগে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে। তারা দাবি করছেন, শুধু ভাঙন শুরু হলে নয়- সম্ভাব্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আগে থেকেই জরিপ করে জিও ব্যাগ ফেলা এবং দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, নদীতে স্রোতের গতি অনেক বেশি। আমরা আপাতত জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা করছি এবং স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় জানান, পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করে দ্রুত সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

 
                   আব্দুল আজিজ শিশির, শরীয়তপুর
                                                  আব্দুল আজিজ শিশির, শরীয়তপুর
               
 
 
 
