প্রতিমা তৈরির খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ, বাড়েনি আয়

পাবনার বেড়া উপজেলার নাকালিয়ার বাসিন্দা ধনঞ্জয় পাল। ৪০ বছর ধরে পাবনার বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা তৈরি করেন। এবছরও কারিগরসহ ছয়জনকে নিয়ে ৯টি মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। তার বানানো সর্বোচ্চ ব্যয়ের প্রতিমার বাজেট এক লাখ টাকা। পাবনা শহরের পাথরতলার রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম মন্দিরের জন্য প্রতিমাটি বানানো হয়েছে। এখন বাকি রঙ ও ফিনিশিংয়ের কাজ। একই অবস্থা অন্য প্রতিমারও। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে প্রায় আড়াই মাস ধরে চলা তাদের ব্যস্ততার বিদায় নেবার পালা। পালা বিপুল পারিশ্রমিকে খুশি হবারও। কিন্তু সেই খুশির পূর্বছাপ দেখা করা যাচ্ছে না তাদের মুখে। উল্টো শোনা গেলো অসহায়ত্বের গল্প।
ধনঞ্জয় পাল জানান, আগের মত লাভ নেই প্রতিমা তৈরিতে। দিন দিন মণ্ডপগুলোর বাজেট কমছে। তুলনামূলক সুনিপূণ কারুকাজ নাহলেও কম বাজেটে পূজা সম্পন্ন করাটাই যেনো মুল বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর বড় কারণ প্রতিমা তৈরিতে ব্যয় বৃদ্ধি। গত ১০ বছরে খরচ বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। কিন্তু আয় বাড়েনি। ফলে দুর্দশায় নিমজ্জিত হচ্ছে পেশা।
লাখ টাকা বাজেটের প্রতিমার খরচ প্রসঙ্গে ধনঞ্জয় বলেন, ওই প্রতিমায় এক লাখ টাকার চুক্তি নিয়েছি। এরমধ্যে শুধু কমপক্ষে ৪৫ থেকে ৪৮ হাজার টাকার কাঠই লেগেছে। মাটি লেগেছে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকা। এরপর তো খড়, কাপড় ও রঙসহ অন্যান্য খরচ রয়েছেই। তাতে উপকরণবাবদ সবমিলিয়ে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচই হয়ে যাবে। বাকি যা থাকবে ওরমধ্য থেকে লেবার বিল ভাগাভাগি করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে এক লাখ টাকা ইনভেস্ট করে লাভ তেমন কিছুই থাকে না।
ধনঞ্জয় পাল বলেন, একটা প্রতিমা বানাতে প্রায় ১০ দিন সময় লাগে। লেবার লাগে প্রায় ৪০ থেকে ৫০টি। সর্বনিম্ন ৮০০ টাকার লেবার আছে আমার এখানে। এর কমে লেবার মেলে না। আর কারিগরকে দিতে হয় এক হাজার ২০০ টাকা। ১০ বছর আগের তুলনায় খরচ অনেক বেশি। লেবার প্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি। এই পেশায় আমাদের টিকে থাকাই এখন মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিমা তৈরির আরেক কারিগর দেবেশ পাল। তিনি জেলার আমিনপুর থানার সাগরকান্দি ইউনিয়নের গোবিন্দপুরের বাসিন্দা। ৩০ বছর ধরে পাবনা শহর, আটঘরিয়া, ঈশ্বরদী, সুজানগর, সাঁথিয়া ও বেড়া উপজেলার বিভিন্ন মন্দিরে প্রতিমা তৈরির কাজ করেন। দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এবছরও পাঁচজন শ্রমিক নিয়ে পাবনা শহরের রাধানগর, শালগাড়িয়া ও গোপালপুরসহ বেশকিছু এলাকা প্রতিমা তৈরি করছেন তিনি। মাটির কাজ শেষে এখন রঙ করা শুরু করেছেন। দেবেশ পাল জানান, এবছর সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা বাজেটের একটি প্রতিমা বানাচ্ছেন। এ প্রতিমা তৈরিতে খড়, কাঁদামাটি, কাপড়, বাঁশ-কাঠ ও রঙে খরচ হবে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এরপর লেবারের মজুরি দিতে লাগবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
পূজা উদযাপন পষিদের তথ্যমতে, পাবনা জেলায় এবছর ৩৪৫টি মন্দির বা মন্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। এরমধ্যে পাবনা সদরে ৫১ টি, ঈশ্বরদীতে ৩০, আটঘরিয়ায় ১৫, চাটমোহরে ৫২, ফরিদপুরে ১৭, ভাঙ্গুড়ায় ২১, বেড়ায় ৬৩, সাঁথিয়ায় ৪১ ও সুজানগরে ৫৫টি মন্ডপ রয়েছে। ইতোমধ্যে এসব মন্দিরে শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে।
পূজা উপযাপন পরিষদ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি প্রভাস কুমার ভদ্র বলেন, মন্দিরগুলোতে প্রতিমা তৈরিসহ নানা ব্যস্ততা চলছে। উৎসবমূখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব পালিত হবে। ইতোমধ্যে জেলা পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের বৈঠক হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ তারা সবধরনের সহযোগিতা করছেন। মন্দিরপ্রতি ৫০০ কেজি করে চাউল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসন মন্দিরের নিরাপত্তা দিচ্ছেন। আমরা নিজেরাও মন্দিরের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার কাজ করছি।
পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) মো. মশিউর রহমান মন্ডল বলেন, দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে জেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। মন্দিরগুলো নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা নেই।