‘মাথায় কালো টুপি পরিয়ে তুলে নিয়ে ইনজেকশন দিয়ে অজ্ঞান করা হয়’
চানখারপুল হত্যা মামলার জবানবন্দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কিছু লোকজন আমাকে মাথায় কালো টুপি পরিয়ে তুলে নিয়ে যায়। ঐ রাতে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে আন্দোলন প্রত্যাখানে একটি ভিডিও বার্তা প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া হয়। আমি রাজি না হলে আমাকে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলা হয়।
জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আটজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এসব তথ্য তুলে ধরেন। তিনি এ মামলায় ১৯ তম সাক্ষী।
বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) বেলা পৌনে তিনটার দিকে ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে সাক্ষ্য প্রদান শুরু হয়। প্যানেলের বাকি দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বিকেল ৫টা পর্যন্ত বর্তমান এই উপদেষ্টার সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। তবে শেষ না হওয়ায় অবশিষ্ট সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
সাক্ষীর জবানবন্দিতে আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, আমি বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি।
আমি ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সমন্বয়ক ছিলাম। সরকারি চাকরিতে কোটা প্রথা সংস্কারের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছিল।
২০১৮ সালে এই কোটা প্রথা সংস্কারের আন্দোলন ব্যাপক মাত্রায় দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার চাপে পড়ে ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকুরীতে কোটা প্রথা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করতে বাধা দেওয়া হয়। ২০১৮ সালের আন্দোলনেও আমি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করি। কোটা বাতিলের ঐ আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট মামলা দায়ের করা হয়।
২০২৪ সালে ৫ জুন হাইকোর্ট বিভাগ কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপনটি অবৈধ ঘোষণা করে কোটা প্রথা পুনর্বহাল করে। এই রায়ের প্রতিবাদে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করি। এরপর কোরবানির ঈদের ছুটি হয়ে যায়। আমরা কোরবানির ঈদের পর ১ জুলাই থেকে পুনরায় আন্দোলন শুরু করি।
২০২৪ সালের ১ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ ও জেলা শহর পর্যায়ে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চলতে থাকে। ১৪ জুলাই আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ করি। সেদিন সন্ধ্যায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে।
এর প্রতিবাদে ঐদিন রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েদের হলসহ বিভিন্ন হলের ছাত্রছাত্রীরা হলের গেইটের তালা ভেঙে রাজু ভাস্কর্যের সামনে একত্রিত হয়।
সেখানে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীরা "তুমি কে আমি কে- রাজাকার, রাজাকার, কে বলেছে, কে বলেছে- স্বৈরাচার, স্বৈরাচার" ইত্যাদি শ্লোগান দিতে থাকে এবং তখন থেকে আন্দোলনে একটা নতুন মাত্রা যোগ হয়।
পরদিন ১৫ জুলাই ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের আন্দোলন দমাতে ছাত্রলীগই যথেষ্ট মর্মে উস্কানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে। তার এই বক্তব্যের পরপরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ বহিরাগত ছাত্রলীগ ক্যাডাররা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়। তাদের হামলায় শতাধিক ছাত্রছাত্রী রক্তাক্ত ও গুরুতর আহত হয়। তাদের মধ্যে ছাত্রীদের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য ছিল। আহত ছাত্রছাত্রীরা ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য গেলে সেখানেও ছাত্রলীগ তাদের উপর হামলা করে।
এই হামলার প্রতিবাদে ১৬ জুলাই ২০২৪ সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়। সেদিন শহীদ মিনারে আন্দোলনরত অবস্থায় আমরা জানতে পারি যে, রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক আবু সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। পরে জানতে পারি সেদিন চট্টগ্রামের ওয়াসিমসহ সারাদেশে সর্বমোট ছয়জন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছে।
১৭ জুলাই ২০২৪ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কফিন মিছিল ও গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালন করি। তখন আর এ আন্দোলন শুধুমাত্র কোটা সংস্কার দাবিতে সীমাবদ্ধ ছিল না। রাজু ভাস্কর্যে গায়েবানা জানাজা কর্মসূচি পালনের পূর্বেই আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সেখান থেকে ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আক্তার হোসেনসহ দুজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। সংঘর্ষ এড়াতে আমরা ভিসি চত্বরে গায়েবানা জানাজা পালন করি। জানাজা শেষে কফিন মিছিল বের করার সাথে সাথে পুলিশ আমাদের উপর হামলা করে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর দিকের হলপাড়ার দিকে অবরুদ্ধ হয়ে যাই। সেদিন সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদসহ শতাধিক আন্দোলনকারী পুলিশের হামলায় আহত হয়। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
এরপর আমরা জাতীয়ভাবে কর্মসূচি ঘোষণার সিদ্ধান্ত নিই এবং পরদিন ১৮ জুলাই ২০২৪ সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করি। সেদিন দেশব্যাপী পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের উপর ব্যাপকভাবে গুলিবর্ষণ করে। সেদিন সারাদেশে কমপক্ষে ২৯ জন আন্দোলনকারী নিহত হওয়ার খবর পাই।
আন্দোলনের এ পর্যায়ে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদের সাথে আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য যোগাযোগ শুরু করে। আমরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত রাখি। সেদিন সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পুড়িয়ে দিয়ে তার দায় আন্দোলনকারীদের উপর চাপানো হয়।
আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয় এবং ব্লক রেইড দিয়ে ব্যাপক মাত্রায় ধরপাকড় শুরু করা হয়। সেদিন রাতে সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়।
১৯ জুলাই ২০২৪ আমাদের কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালিত হয়। এই দিন আন্দোলনকারীদের উপর হেলিকপ্টার থেকে গুলি ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়। তাছাড়াও আন্দোলন দমনে আন্দোলনকারীদের উপর ব্যাপক মাত্রায় নির্বিচারে গুলি করা হয়। যার ফলশ্রুতিতে সেদিন সারা দেশে শতাধিক লোক নিহত হওয়ার খবর পাই। সেদিন রাতে ঢাকার গুলশান নিকেতন এলাকা থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে ডিবি পরিচয়ে সাদা পোশাকধারী কিছু লোকজন আমাকে মাথায় কালো টুপি পরিয়ে তুলে নিয়ে যায়। ঐ রাতে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে আন্দোলন প্রত্যাখানে একটি ভিডিও বার্তা প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া হয়। আমি রাজি না হলে আমাকে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলা হয়।
২৪ জুলাই সকালে আমাকে তুলে নিয়ে যে রুমে রাখা হয় তা ৫ আগস্ট পরবর্তীকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আয়না ঘর পরিদর্শনে গিয়ে বুঝতে পারি যে এটি সেই জায়গা।
আমি ছাড়া পেয়ে গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের জন্য ভর্তি হই। সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামও একই হাসপাতালে ভর্তি হয়। হাসপাতালে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন আমাদেরকে নজরদারিতে রাখে। আমাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয় এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।
১৯ জুলাই ২০২৪ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আমি, নাহিদ ইসলাম ও বাকের মজুমদারসহ সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামকেও তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাকে আন্দোলন প্রত্যাহারে একটি ভিডিও বার্তা প্রদানের জন্য চাপ দেওয়া হয়। আমি রাজি না হলে আমাকে ইনজেকশন পুশ করে অজ্ঞান করে ফেলা হয়।
২৪ জুলাই সকালে আমাকে নিকেতনস্থ একটি স্থানে রেখে যায়। আমাকে তুলে নিয়ে যে রুমে রাখা হয় তা ৫ আগস্ট পরবর্তীকালে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় আয়না ঘর পরিদর্শনে গিয়ে বুঝতে পারি যে এটি সেই জায়গা।
২৬ জুলাই ২০২৪ গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় আমি, নাহিদ ইসলাম ও আবু বাকের মজুমদারকে। হাসপাতাল থেকে তুলে ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৭ জুলাই সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমকে ডিবি কার্যলয়ে তুলে আনা হয়। ২৮ জুলাই সমন্বয়ক নুসরাত তাবাসসুমকেও ডিবি কার্যালয়ে তুলে আনা হয়। সেখানে আমাদেরকে আন্দোলন প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দিতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাদের পরিবারের সদস্যদেরকেও ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়। তাদেরকে দিয়ে আমরা মুক্ত আছি মর্মে মিডিয়ায় বক্তব্য প্রচারে বাধ্য করা হয়। তৎকালীন ডিবি প্রধান হারুনুর রশীদ (ডিবি হারুন) এবং রমনা জোনের ডিসি হুমায়ুন কবীর আন্দোলন প্রত্যাহারে আমাদের উপর চাপ ও হুমকি প্রদান করতে থাকে।
আমাদেরকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে আন্দোলন প্রত্যাহারে জন্য চাপ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হয়। আমাদেরকে বার বার বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশেই আমাদেরকে তুলে আনা হয়েছে এবং আন্দোলন প্রত্যাহারের চাপ দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলন প্রত্যাহারে রাজি না হলে আমাদের হত্যা করা হবে মর্মে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল। তারা আরও বলে যে, তারা দয়া করে আমাদেরকে এখনো বাঁচিয়ে রেখেছে।
ডিবি তাদের লিখিত একটি বক্তব্য জোরপূর্বক আমাদেরকে দিয়ে স্বাক্ষর করিয়ে পাঠ করায় এবং সেটি মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করে গণমাধ্যমে প্রচার করা হয়। ডিবি অফিসে বন্দি অবস্থায় আমরা আমরণ অনশন শুরু করি। টানা ৩২ ঘন্টা অনশনে থাকার পর আমাদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ১ আগস্ট আমাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তি পাওয়ার পর আমরা আন্দোলন প্রত্যাহারের উক্ত ভিডিও বার্তা জোর পূর্বক গ্রহণ করা হয়েছিল মর্মে জাতির উদ্দেশ্যে বক্তব্য প্রদান করি এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেই।
৩ আগস্ট ২০২৪ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকারের পতন ও ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা বিলোপে একদফা কর্মসূচি ও অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করি। উক্ত কর্মসূচিতে দেশের সকল শ্রেণিপেশার মানুষ একাত্বতা ঘোষণা করে।
৪ আগস্ট ২০২৪ সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন কর্মসূচি পালিত হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে শাহবাগে আমাদের সমাবেশ ছিল। সেদিন সন্ধ্যায় শাহবাগে আমাদের সমাবেশস্থলে পুলিশ গুলি করায় এবং সেখানে কমপক্ষে চারজন নিহত হয় এবং অসংখ্য আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতা আহত হয় মর্মে খবর পাই। সেদিন বিকেলে ৫ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ ও ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচি মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠন কর্তৃক ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয় মর্মে জানতে পারি। এ কারণে আমি সমন্বয়কদের সাথে আলোচনাক্রমে দুই ঘণ্টার মধ্যে পরবর্তী কর্মসূচী পরিবর্তন করে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ৬ তারিখের পরিবর্তে ৫ তারিখে পালনের আহ্বান জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বার্তা প্রচার করি।
৫ আগস্ট ২০২৪ ভোর থেকে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি পালনের জন্য সারা দেশ থেকে সাধারণ জনগণ ঢাকা অভিমুখে আসতে শুরু করে। আমি, সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ও সমন্বয়ক মোয়াজ্জেম হোসেন চানখারপুল হয়ে শহীদ মিনারের দিকে আসার চেষ্টা করি। তখন আমরা দেখতে পাই যে, পুলিশ ও এপিবিএন সদস্যরা নাজিম উদ্দিন রোডসহ চানখারপুল এলাকায় অবস্থানরত অন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়ছে। তখন বেলা আনুমানিক ১১টা বাজে। চানখারপুল এলাকায় সেদিন আমরা ৪০০ থেকে ৫০০ আন্দোলনকারী অবস্থান করছিলাম। পুলিশের গুলিতে একের পর এক আন্দোলনকারীদের আহত হতে দেখতে পাই। আহতদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করি। সেখানে আন্দোলনকারীদের উপর পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ এবং শটগান ও চাইনিজ রাইফেন ব্যবহার করে গুলি করে। আমার সামনে পুলিশের গুলিতে দুইজন আন্দোলনকারী নিহত হয়। পরবর্তীতে জানতে পারি যে, ঐ দিন চানখারপুল এলাকায় পুলিশের গুলিতে আনাস, ইয়ামূল ও ইয়াকুবসহ ছয়জন আন্দোলনকারী নিহত হয়। যাত্রাবাড়ী থেকে একটি বড় মিছিল আসে। আনুমানিক ২টার দিকে সেখান থেকে পুলিশ চলে যায়।
আনুমানিক দেড়টার দিকে আমরা জানতে পারি যে, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে। আমরা মিছিল নিয়ে গণভবনের উদ্দেশে রওনা হই। যাওয়ার পথে আমরা চতুর্দিকে গণভবনগামী জনস্রোত দেখতে পাই। আনুমানিক বিকেল ৪টার দিকে আমরা সংসদ ভবন এলাকায় পৌঁছাই।