শিশুশ্রম বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান

শিশুশ্রম বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে গণমাধ্যমকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নেওয়া বক্তারা।
তারা বলেন, শিশুশ্রম নিয়ে সরকার, গণমাধ্যম, উন্নয়নকর্মী— সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। শিশুশ্রম বিষয়ক খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করতে হবে। শুধুমাত্র দিবস-কেন্দ্রিক আয়োজন নয়, সারা বছর এ বিষয়ে কাজ করতে হবে। কি কারণে শিশুরা শ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে তা নিয়ে অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে হবে।
আজ সোমবার (১৩ অক্টোবর) অ্যাকশন ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট (এএসডি), এডুকো বাংলাদেশ ও শাপলা নীড় বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর একটি রেস্টুরেন্টে এ গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করা হয়।
’শিশুশ্রম নিরসনে গণসচেতনতা বৃদ্ধিতে গণমাধ্যমের ভূমিকা : বর্তমান বাস্তবতা ও আমাদের প্রত্যাশা’ শীর্ষক এই বৈঠকে কি-নোট উপস্থাপন করেন ঢাকা বিম্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. নাজমুজজামান ভূঁইয়া।
এতে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন আক্তার, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল ওয়াদুদ, এএসডির নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম, এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ, শাপলা নীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউমি ইয়াগিশিতা মাসুদা, ইউনিসেফ বাংলাদেশের চাইল্ড প্রটেকশন বিভাগের ফাতেমা খায়রুন্নাহার, বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরোমের পরিচালক খন্দকার রিয়াজ হোসেন, বাংলাদেশ লেবার ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আশরাফ উদ্দিন, এসওএস চিলড্রেন ভিলেজের ন্যাশনাল ডিরেক্টর ড. এনামুল হক। এছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদিকরা গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
স্বাগত বক্তব্য দেন এএসডির নির্বাহী পরিচালক এম এ করিম। এরপর শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন এডুকো বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আব্দুল হামিদ এবং শাপলা নীড় বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ইউমি ইয়াগিশিতা মাসুদা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন এএসডির ইউকেএম ফারহানা সুলতানা ও এডুকো বাংলাদেশের আফজাল কবির খান।
আলোচনায় গোলাম রাব্বানী বলেন, যেসব শিশু শ্রমিক হিসেবে কাজ করে তাদের মা-বাবাকে সচেতন করতে হবে। নিউ মিডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এ বিষয়গুলো তুলে ধরতে হবে। তা ছাড়া এ ক্ষেত্রে বাজেট বাড়াতে হবে।
সাংবাদিক মাইদুর রহমান রুবেল বলেন, অনেকেই শিশু অধিকার লঙ্ঘন করছেন, জেনে-বুঝে বা না বুঝে। শিশুশ্রম নিয়ে সরকার, গণমাধ্যম, উন্নয়নকর্মী— সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। গণমাধ্যমের অনেক চ্যালেঞ্জ বা বাধা আছে। পারিবারিক বিপর্যয় রোধ, খাবারের সংস্থান, সঠিক কারিগরি শিক্ষায় শিশুদের শিক্ষিত করতে হবে।
সাংবাদিক ফেরদৌস মোবারক বলেন, দেশকে বড় করতে হলে শিশুকে সঠিকভাবে বড় করতে হবে। শিশুশ্রম বিষয়ক খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করতে হবে। সাংবাদিক দাউদ হোসাইন রনি বলেন, অনেক পত্রিকায় করোনার পর থেকে শিশু বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। এই গোলটেবিল বৈঠকের চেয়েও জরুরি, যারা শিশুশ্রমিক নিয়ে গ্রামে বা প্রত্যন্ত এলাকায় কাজ করে তাদেরকে সচেতন করা।
সাংবাদিক ওমর ফারুক বলেন, শিশু শ্রমিকের মা-বাবা কিন্তু এই গোলটেবিল বৈঠক দেখছেন না, তাই তাদেরকে যেন সচেতন করা যায় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। মাহফুজুর রহমান মানিক বলেন, শিশুরা যখন স্কুলে থাকার কথা, তখন তারা কাজে নিয়োজিত থাকে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ৯৫ ভাগ শিশু স্কুলে আসে। স্কুলে ড্রপ আউটের সংখ্যা ১৬ শতাংশ, যারা শিশু শ্রমে নিয়োজিত হচ্ছে। শুধুমাত্র দিবস কেন্দ্রিক আয়োজন নয়, সারা বছর কর্মসূচির আয়োজন করতে হবে এবং অনুসন্ধানী রিপোর্ট করতে হবে, কি কারণে শিশুরা শ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে। মিজানুর রহমান রিপন বলেন, গণমাধ্যমে শিশুদের নিয়ে বছরব্যাপী পরিকল্পনা করতে হবে। গৃহকাজে নিয়োজিত শিশুদের মা-বাবা সচেতন না। তাই তাদেরকে সচেতন করতে হবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শারমিন আক্তার বলেন, বাল্যবিয়ে রোধে যেভাবে প্রচার হয়, শিশুশ্রম নিয়ে সেভাবে হয়নি। মন্ত্রণালয় গণমাধ্যমের সাথে বসে শিশু বিষয়ক পাতা বা বিভাগ করা যায় কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করা হবে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, গণমাধ্যমে তুলে ধরতে হবে শিশুশ্রমের সকল তথ্য।
এছাড়া আইএলও, ইউনিসেফসহ শিশু অধিকার ও শিশুশ্রম নিরসন বিষযে কর্মরত জাতীয় ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ও নেটওয়ার্ক/প্লাটফর্মের প্রতিনিধিরা আলোচনায় অংশ নেন।