জুলাই জাতীয় সনদ সই আজ, শেষ মুহূর্তেও রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতা
বহুল প্রতীক্ষিত জুলাই সনদ সই অনুষ্ঠান আজ শুক্রবার (১৭ অক্টোবর)। এ উপলক্ষে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এতে অংশগ্রহণ করবেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। তবে শেষ সময়েও নানা শর্ত ও ‘নোট অব ডিসেন্ট’ নিয়ে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের ব্যাপারে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।
ঐতিহাসিক এই মুহূর্তটি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম। সনদ সই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। বিএনপি জুলাই সনদে সই করবে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তবে এক্ষেত্রে শর্ত জুড়ে দিয়েছেন তিনি।
একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘আমরা (বিএনপি) অবশ্যই জুলাই সনদে স্বাক্ষর করব; তবে যে কথাগুলো আমরা বলছি, সেগুলো যদি লিপিবদ্ধ করা হয়। যেগুলোতে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) দিয়েছি, সেগুলো যদি লিপিবদ্ধ করা হয়।’
জামায়াত বলেছে, তারা সরকারের সম্মানে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে, কিন্তু স্বাক্ষরের সিদ্ধান্ত পরে জানাবে।
তবে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। বৃহস্পতিবার দিনগত গভীর রাতে ফেসবুকে এনসিপির মিডিয়া গ্রুপে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
বার্তায় বলা হয়েছে, ‘জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অংশগ্রহণ করবে না। এনসিপি মনে করে, এই স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কোনো আইনি ভিত্তি অর্জিত হবে না। এটি কেবল আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। এনসিপি বহুবার স্পষ্টভাবে আইনি ভিত্তির প্রয়োজনীয়তার কথা জানিয়েছে।’
অবশ্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পরবর্তী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে এনসিপি। দাবি পূরণ হলে পরবর্তীতে দলটি স্বাক্ষর প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করবে বলে বার্তায় জানানো হয়েছে।
জুলাই জাতীয় সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের আগে সংশোধিত খসড়া না পেলে সনদে সই করবে না বলে আগেই জানিয়েছে বাম ধারার চারটি দল— বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাসদ (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশ জাসদ।
দলগুলো কেন জুলাই সনদে সই করবে না, তার কারণ ব্যাখ্যা করে গতকাল (বৃহস্পতিবার) এক সংবাদ সম্মেলনে তারা জানায়, জুলাই সনদের প্রথম অংশে পটভূমিতে মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার ইতিহাস এবং বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলনের ইতিহাস সঠিকভাবে উপস্থাপিত হয়নি, বারবার সংশোধনী দিলেও সেগুলো সন্নিবেশিত করা হয়নি।
অন্যদিকে, জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।
এ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশে মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেছেন, ‘আমরা সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাচ্ছি। এটাও চাচ্ছি যে, স্বাক্ষরের বিষয়টি শেষ হয়ে যাক। তবে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়া, জুলাই যোদ্ধাদের সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা ও জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটের বিষয়ে আমাদের আন্দোলন চলতে থাকবে।’
তবে আজ (শুক্রবার) জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় খোলা আকাশের নিচে আনুষ্ঠানিকভাবে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর হলেও রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য এরপরও সনদে স্বাক্ষর করার সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আগামীকাল সব দলের স্বাক্ষর নেওয়া গেলে ভালো। তবে যদি কোনো দল পরবর্তীতে স্বাক্ষরের কথা বলে, তারা তো সনদ প্রক্রিয়ার অংশীদার—শরিক হিসেবে সেটা করতে পারবে।’
তারপরও সবাই একসঙ্গে উৎসবমুখর পরিবেশে জুলাই সনদে সই করবে বলে কমিশনের প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় ‘আইনি ভিত্তি ছাড়া ও বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা না থাকায়’ জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সনদে সই করবে না— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, ‘এনসিপির বক্তব্য কমিশন গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছে। তারা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের অগ্রগামী শক্তি ছিল এবং সনদ প্রক্রিয়ায়ও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। কমিশনও মনে করে জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দেওয়া জরুরি, এবং মেয়াদ থাকা অবস্থায় আমরা এ বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ সুপারিশ দেব।’
বাম দলগুলো সনদে সই না করার ঘোষণা দিলেও তারাও আলোচনার অংশ হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানান, আজকের (শুক্রবার) অনুষ্ঠানে জুলাই সনদ প্রণয়নের প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ কার্যকারিতা নিয়ে ভিডিও প্রদর্শন করা হবে এবং আগামী দুই মাস এ বিষয়ে আরও কাজ চলবে।