শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী করতে হবে : মঈন খান

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জনগণকে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কোনো পরিকল্পনাই সফল হবে না। শিক্ষিত জনগোষ্ঠীকে উৎপাদনমুখী কর্মসংস্থানের বাস্তব পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। এক কোটি তরুণকে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা দিয়ে কর্মে নিয়োজিত করতে বিএনপি কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের জনসংখ্যার ৫২ শতাংশ যুবক এবং যুবক শ্রেণিতে বাংলাদেশ বিশ্বে সর্বোচ্চ সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। সে যুবক শ্রেণিকে জনসম্পদে রূপান্তর করতে বিএনপি সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
আজ শনিবার (১৮ অক্টোবর) এডুকেশন রিফর্ম ইনিশিয়েটিভের (ইআরআই) উদ্যোগে বাংলাদেশ এগ্রিকালচারাল রিসার্চ কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে ‘সোসিও ইকোনোমিক ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ থ্রো টিভ্যাট : প্রবলেমস অ্যান্ড প্রসপেক্টস’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন মঈন খান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইআরআইয়ের সভাপতি ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন।
ড. মঈন খান বলেন, রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘোষিত যুবকের হাতকে কর্মীর হাতে রূপান্তরের প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধে বলা হয়, বাংলাদেশের ২০ শতাংশ যুবক বিশ্ববিদ্যালয় স্মাতক কিন্তু কর্মসংস্থান করতে পেরেছে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ যুবক। এটা হতাশাজনক। ইউজিসির ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের জরিপে প্রতিবছর ১০ লাখ যুবক জব মার্কেটে প্রবেশ করলেও অর্ধেকেরও কম কর্মসংস্থান করতে পারে। বিএমইটির ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দের পরিসংখ্যানে প্রতিবছর ১০ লাখ যুবক বিদেশে চাকরির জন্য গেলেও এদের অধিকাংশ অদক্ষ। ফলে তারা বেতন কম পায় ও নিম্নমানের কাজে নিয়োজিত হয়। সুতরাং, প্রশিক্ষিত জনগণ ব্যতীত দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
মূল প্রবন্ধে বিদেশে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার। উদাহরণ দিয়ে বলা হয়, জার্মানিতে ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থী ভোকেশনাল শিক্ষা গ্রহণ করে কাজে প্রবেশ করে যায়। মালয়েশিয়া প্রতিবছর বিশ লাখ যুবককে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষা দান করে। সিঙ্গাপুর স্কিলস ফিউচার প্রোগ্রামের আওতায় শিক্ষার সঙ্গে কারখানার সংযোগ স্থাপনের পলিসিতে বয়স নির্বিশেষে সবাইকে ডিজিটাল প্রযুক্তির প্রশিক্ষণ দেয়। ভিয়েতনাম শিক্ষার সঙ্গে ম্যানুফেকচারের লিংকআপ করে বেকারত্ব ৭ শতাংশের কমে নামিয়ে এনেছে। কিন্তু বাংলাদেশ কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় দৃশ্যমানভাবে পিছিয়ে আছে। এই উপলব্ধি থেকে বিএনপি কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে।
সেমিনারে বিশেষ বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির (বুটেক্স) উপাচার্য ডক্টর জুলহাস উদ্দিন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ডা. এস এম জিয়াউদ্দিন হায়দার, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রুহুল আমিন, বিএনপির কুমিল্লা অঞ্চলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মো. সেলিম ভুঁইয়া, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক থটের মহাপরিচালক ড. মুহাম্মদ আবদুল আজীজ উপস্থিত ছিলেন।
সুপারিশমালার মধ্যে কারিগরি শিক্ষার উন্মুক্তকরণ ও মূলধারার শিক্ষা হিসেবে গ্রহণ, একটা একক অথরিটির মাধ্যমে একীভূত দক্ষতা শাসন ব্যবস্থা সৃষ্টি, কলকারখানার চাহিদা ভিত্তিক কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ ও শক্তিশালীকরণ, দক্ষতা উন্নয়ন তহবিল গঠন, ডিজিটাল ও সবুজ অর্থনীতির ওপর গুরুত্বারোপ, নারী সমাজকে সমানতালে কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষায় সম্পৃক্তকরণকে উল্লেখ করা হয়।
প্রবন্ধের বাইরে সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. আ ন ম এহছানুল হক মিলন বলেন, ‘আজকের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ বিএনপির ভাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মতো নেতৃত্ব চায়। বাংলাদেশ আপনার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি শ্রদ্ধেয় শিক্ষকদের বলতে চাই, আপনাদের জাতীয়করণ, ভাতা বাড়ানোসহ কোনো কিছুর জন্য চিন্তা করতে হবে না। বিএনপির ভাপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রথম গুরুত্ব শিক্ষায়। আমি যখন শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী ছিলাম, তখন তিনি কোনো দায়িত্বে ছিলেন না, কিন্তু প্রতিনিয়ত তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থা যুগোপযোগী করা যায়। আমি বিশ্বাস করি, তিনি বাংলাদেশে এসে আগামী দিনে প্রধানমন্ত্রী যখন হবেন, তখন ওনার একমাত্র ভীষণ হবে শিক্ষা এবং শিক্ষা।’
সেমিনারে সেলিম ভূইয়া বলেন, সার্টিফিকেট সর্বস্ব শিক্ষার পরিবর্তে তরুণ সমাজকে কর্মমুখী শিক্ষার উপর আগ্রহী হতে হবে।
ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, দেশের অধিকাংশ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে একাউন্টিং পড়ানো হলেও দেশের কর্পোরেট বডিতে চিফ অ্যাকাউন্টেন্ট বাইরের। তার মানে আমরা যে থিউরি বিদ্যা শিখাই, তা বাস্তবে কাজে লাগছে না, এখানে শিক্ষা আর বাস্তবতার মধ্যে ফারাক রয়েছে যা পূরণ করতে হবে, সিলেবাসকে নতুন করে সাজাতে হবে।
ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শামসুন্নাহার বলেন, কারিগরি ও ভোকেশনাল শিক্ষার কারিকুলামকে দেশ-বিদেশের চাহিদার উপযোগী করে তৈরি করতে হবে। তিনি শিক্ষা খাতে বাজেট বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। বিদ্যমান কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কারিকুলাম পর্যালোচনা প্রয়োজন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার বলেন, কর্মসংস্থান বিহীন শিক্ষা অসম্পূর্ণ বিদ্যা। তাই শিক্ষাকে কর্মসংস্থানমুখী করতে হবে। বিএনপির ৩১ দফায় চাহিদা ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা বাস্তবায়ন করে সক্ষম শিক্ষিত জাতি গড়ে তোলার অঙ্গীকার করা হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষার মান ও বেতন বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে বরাদ্দ ২ শতাংশ থেকে ৫ শতাংশে উন্নীত করা হবে।