আমরা ঐক্যের রাজনীতি সৃষ্টি করতে চাই : মির্জা ফখরুল
বিভাজন নয়, ঐক্যের রাজনীতি করার দৃঢ় প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ দেশ তৈরি করতে চাই। এই কথা আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২০২৪ এর ৫ আগস্ট রাতেই বলেছিলেন—আমরা এই দেশে আর প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা চাই না। আমরা ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষকে জয় করি। আমরা একটি ঐক্যের রাজনীতি সৃষ্টি করতে চাই, সেটাই হচ্ছে মূল কথা।’
আজ সোমবার (২০ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের অর্ধশতাধিক সদস্য বিএনপিতে যোগদানের এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘যে কথা আমরা বলি সেটা হচ্ছে, শতফুল ফুটবে। সেই শতফুল থেকে একটা স্লোগান সেই বাগান থেকে বেরিয়ে আসবে, সেটাই হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদ। অনেক ভুল-বুঝাবুঝি হয়েছে, অনেক রক্তপাত হয়েছে বাংলাদেশে, অনেক বিভাজন হয়েছে। আমরা এখন এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চাই।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘গত ১৫ বছর ফ্যাসিস্ট সরকার বাংলাদেশের অর্থনীতি, রাজনৈতিক কাঠামো সবকিছুকে ধ্বংস করে ফেলেছে। আমরা সেই ধ্বংসস্তূপ থেকে একটা নতুন বাংলাদেশ দেশ তৈরি করতে চাই, এই কথা আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ২৪ এর ৫ আগস্ট রাতেই একটা ছোট্ট একটা বাণীর মধ্য দিয়ে বলেছিলেন—আমরা এই দেশে আর প্রতিশোধ-প্রতিহিংসা চাই না। আমরা ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষকে জয় করি। আমরা একটা ঐক্যের রাজনীতি সৃষ্টি করতে চাই। সেটাই হচ্ছে মূল কথা।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজকে অনেকে অনেক কথা বলবে, স্বার্থের কথা বলবে এবং বলছেও। আমরা রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্ন কথা বলছি। এখন আমাদের দর-কষাকষি করছি। এখন আমাদের স্বার্থগুলো সামনে এসে গেছে। কোনটাকে মেনে নেব, কোনটাকে মেনে নেব না, তাই না? কেউ বলছি পিআর করতে হবে, কেউ বলছে পিআর করা যাবে না। আমরা ওই সমস্ত পথে যেতে চাই না। আমরা ১৯৭১ সালে যে বাংলাদেশ তৈরি করেছিলাম, যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলাম এবং ২০২৪ সালে ৩৬ জুলাই আমরা অভ্যুত্থানে নতুন বাংলাদেশে আবির্ভূত হলাম, সেই বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চাই।’
এ সময় ২০২৪ এর ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিএনপি মহাসচিব।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা সোমনাথ দে, কপিল কৃষ্ণ মন্ডল, সমেন সাহার নেতৃত্বে গোপালগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে বসবাসরত অর্ধশতাধিক হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যরা বিএনপি মহাসচিবের হাতে ফুল দিয়ে বিএনপিতে যোগদান করেন।
নতুন যোগদানকারীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আসুন আমরা আমাদের মধ্যে আরও বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলি। এই যে ভ্রান্ত ধারণা বিশেষ করে বাইরের কিছু কিছু মানুষ, কিছু দেশ, কিছু মিডিয়া—তারা বাংলাদেশের ব্যাপারে একটা মিথ্যা প্রচারণার চেষ্টা করেছে। আমরা এই ধারণা পাল্টে দিতে চাই। আপনারা দেখেছেন, দুর্গাপূজায় এবং তার আগের দুর্গাপূজাও আমাদের বিএনপির নেতাকর্মীরা আপনাদের প্রতিটি পূজামণ্ডপে গেছে এবং আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার নিজের ঠাকুরগাঁও এলাকায় ২৬৫টি পূজামণ্ডপ আছে, সেখানে তাদের সঙ্গে আমাদের নেতাকর্মীরা পূজার যে আনন্দ, সেটাকে ভাগ করে নিয়েছি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকের সময়টা অনেক কঠিন। কিছু মানুষ চেষ্টা করছে আমাদের একাত্তর সালের যুদ্ধে আমরা যে দেশ তৈরি করেছি, যে ঐক্য সৃষ্টি করেছি, ২৪ এর বিপ্লবে যে ঐক্য সৃষ্টি করেছি, সে ঐক্যের মধ্যে ভাঙন ধরাতে। বিভিন্ন রকম কথা বলে, বিভিন্ন রকম কর্ম করে ভাঙতে চায়।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা অত্যন্ত সচেতনভাবে এই ভাঙনের বিপক্ষে। আমরা বাংলাদেশের মানুষ এক, আমরা যারা এই ভূখণ্ডে বাস করি, আমরা সবাই এক হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং চাকমা, মারমা, উরাং সবাই আমরা একইসঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে চাই। আমাদের প্রতিটি সম্প্রদায়ের ছেলেমেয়েরা যেন লেখাপড়ার সুযোগ পায়, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ পায়, কর্মসংস্থানের সুযোগ পায়, সেটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন, আমাদের চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২০২২ সালে ৩১ দফা দিয়েছেন, সেই ৩১ দফায় খুব পরিষ্কার করে উল্লেখ করা আছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা সেই নেতা দেখতে চাই না, যে নেতা আওয়ামী লীগের মতো পালিয়ে যাবে। আমরা সেই নেতাকে চাই, যিনি যেকোনো মুহূর্তে সবাইকে নিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দেবে। এই বিষয়গুলো আমরা অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে চাই।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘কপিল-সোমনাথ বাবু বলেছেন, তারা কয়েক সপ্তাহের মধ্যে একটা বৃহত্তর সমাবেশ করবেন, যেখানে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি যুক্ত থাকবেন, কথা বলবেন। আমরা আপনাদের নিশ্চয়তা দিতে চাই, আজ থেকে এই মুহূর্ত থেকে আপনাদের সমস্ত সুখ-দুঃখের ব্যাপারে সজাগ-সচেতন থাকব, আপনাদের পাশে থাকব।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের উদ্দেশে বলতে চাই, বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাহিনীকে বলতে চাই, আমরা দেখতে চাই না, আপনারা আমাদের এই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষদের কোনোরকম বিপদের মধ্যে ফেলেছেন, কোনোরকম সমস্যা সৃষ্টি তৈরি করেছেন। এটা আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই। আমার কাছে অনেক খবর আছে। দয়া করে এই সম্প্রদায়ের মানুষদের কেউই কখনো হয়রানি করবেন না। আপনারা আমাদের ভাই, আমরা আপনাদের পাশে আছি এবং সমস্ত শক্তি নিয়ে আমরা আপনাদের পাশে থাকব।’
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য বিজন কান্তি সরকার, রমেন বাবু বক্তব্য দেন।