পাবনায় পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে ৪০ টাকা
পেঁয়াজ উৎপাদনের অন্যতম জেলা পাবনায় মৌসুমের শেষের দিকে এসে পেঁয়াজের ঝাঁজ বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে দাম বেড়েছে ৪০ টাকা। বৃষ্টির জন্য বেড়েছে কিছু সবজির দামও।
আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) বিকেলে পাবনার বড়বাজার ও মাসুম বাজার ঘুরে জানা গেছে এ তথ্য।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, গত সপ্তাহে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৬০-৭০ টাকা, যা বর্তমানে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পেঁয়াজের একটি বড় অংশ উৎপাদন হয় পাবনায়। কয়েক সপ্তাহ ধরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণ প্রায় শেষের দিকে। আবার পেঁয়াজের মৌসুমও শেষ। ফলে কৃষকের ঘরে থাকা পেঁয়াজের মজুদও কমে গেছে। এতে বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বাড়তি।
বড় বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা জনি বলেন, সপ্তাহ খানেক আগে পেঁয়াজের বাজার ঠিকই ছিল। চার-পাঁচ দিন আগে হুট করেই কেজিতে ২০ টাকার বেড়ে ৯০ টাকা হয়। এরপর প্রতিদিন বাড়তে বাড়তে আজ ১১০ টাকায় ঠেকেছে। এখন চাষির ঘরে পেঁয়াজ নেই। মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপণও শেষ। দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যেই নতুন পেঁয়াজ বাজারে আসবে।
তবে শুধু সরবরাহে ঘাটতির কারণেই পেঁয়াজের দাম বাড়ার বিষয়টি মানতে নারাজ ক্রেতারা। তারা বলছেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগানো শুরু হয়েছে তিন-চার সপ্তাহ আগে। ইতোমধ্যে প্রায় লাগানো শেষ। তাহলে হুট করে তিন থেকে চার দিনের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক বিষয় নয়।
তাদের অভিযোগ, কৃষকের ঘরে পেঁয়াজ আসলেই কমে গেছে। তবে বাধাই বা মজুদ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের হাতে এখনও প্রচুর পেঁয়াজ রয়েছে। তারা প্রতিবছর এই সময়টাতে পেঁয়াজের সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে দেয়। বাজারে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের নজরদারি বাড়ানো উচিত।
কৃষক রানা মিয়া জানান, কৃষকের ঘরে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় মজুদ পেঁয়াজ বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছে কৃষকরা। আগামীকাল বৃহস্পতিবার পাবনা জেলার সব থেকে বড় পেঁয়াজের হাট কাশীনাথপুরে বেশি দামের আশা করছেন।
অপরদিকে ভাঙ্গুরা উপজেলার শরৎনগর, কালিবাড়ি ও অষ্টমণীষা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯৫–১০০ টাকা দরে, আর মাঝারি মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০–৮৫ টাকায়। পাড়া-মহল্লার দোকানে একই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০৫–১১০ টাকা কেজিতে।
পার-ভাঙ্গুড়ার কৃষক মজির হোসেন বলেন, শনিবার ৬০ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছিলাম, আজ দিতে হলো কেজিতে ১০০ টাকা। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে দাম প্রায় দ্বিগুণ।
অষ্টমণীষা কাঁচাবাজার থেকে ১০০ টাকা দরে এক কেজি পেঁয়াজ কিনেছেন সুবাহান আলী। তিনি বলেন, তিন-চার দিন আগে পেঁয়াজ কিনেছিলাম ৬০ টাকা কেজি দরে। মাত্র তিন-চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কিনতে হলো ৪০ টাকা বেশি দাম দিয়ে। একই পেঁয়াজ কয়েক দিনে ৪০ টাকা বেড়ে গেল এটা অন্যায়।
শরৎনগর বাজারের সবজি ব্যবসায়ী রইজ উদ্দিন বলেন, বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা বাড়লেও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় এখনও কম।
আড়তদার আফসার আলী জানান, এখন কৃষকের হাতে বেশি পেঁয়াজ নেই। কিছু কৃষক ও মজুদদার সংরক্ষণ করে রেখেছে। ভারতীয় পেঁয়াজও আসেনি তাই দামটা একটু বেড়েছে।
ভাঙ্গুড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোছা. শারমিন জাহান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ বছর উপজেলায় ৫৮৭ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হয়েছে, উৎপাদন ছিল সাত হাজার ৩৩৭ মেট্রিক টন। কৃষকের হাতে পেঁয়াজের মজুদ নেই, তাই ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে বাজারে প্রভাব পড়ছে।’

পলাশ হোসেন, পাবনা (সদর-সুজানগর-আটঘরিয়া-আতাইকুলা)
আপন ইসলাম, পাবনা (চাটমোহর-ভাঙ্গুরা)