তরুণ কৃষক পলাশের কমলা চাষে বাজিমাত
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার সবুজ ও ঊর্বর জনপদে কৃষির ইতিহাস প্রতিদিনই যেন নতুন করে রচিত হচ্ছে। একসময় ধান, সবজি ও নাক ফজলি আম ছিল এখানকার কৃষকদের আয়ের প্রধান নির্ভরতা। কিন্তু এখন যোগ হয়েছে নতুন সম্ভাবনা- ফল চাষ। আর সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দিয়ে আলোচনায় এসেছেন তরুণ কৃষক পলাশ হোসেন।
বদলগাছীর ভাতসাইল গ্রামের যুবক পলাশ ছোটবেলা থেকেই গাছ, মাটি ও চাষাবাদের প্রতি টান অনুভব করতেন। জীবনের এক পর্যায়ে চাকরি হারানোর পর তিনি নতুন করে ভাবেন- এই মাটিকে কীভাবে আরও কাজে লাগানো যায়। সেই ভাবনা থেকেই শুরু হয় তার আম চাষের পথচলা। আধুনিক প্রযুক্তি, নিয়মিত পরিচর্যা ও নিরলস পরিশ্রমে তিনি অল্প সময়েই হয়ে ওঠেন সফল আমচাষি। তার বাগানের আম বদলগাছী ছাড়িয়ে দেশের নানা জেলায় পৌঁছাতে শুরু করে।
তবে পলাশের স্বপ্ন শুধু আমে থেমে থাকেনি। সাফল্যের পর তার মাথায় আসে নতুন পরিকল্পনা- কমলা চাষ। স্থানীয়ভাবে অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, এই মাটিতে কমলা ফলবে কি না। কিন্তু পলাশ ছিলেন দৃঢ় আত্মবিশ্বাসী। কৃষি অফিসের পরামর্শে ও নিজের পরিকল্পনায় তিনি ২০ শতক জমিতে কমলার চারা রোপণ করেন। আজ সেই বাগানে গেলে দেখা যায় সারি সারি সবুজ গাছ, ডালে ঝুলে থাকা পাকা কমলার গাঢ় রঙ, আর বাতাসে ছড়িয়ে থাকা টক-মিষ্টি ঘ্রাণ। যেন বদলগাছীর প্রকৃতিতে জন্ম নিয়েছে একটি নতুন মৌসুম।
পলাশ হোসেন বলেন, আমরা এতদিন ধান আর সবজির ওপর নির্ভর করেছি। আমি চেয়েছি বদলগাছীর কৃষিতে নতুন কিছু যোগ করতে। কমলা সেই নতুন স্বপ্ন। এখন ফলন দেখে বুঝতে পারছি, সিদ্ধান্ত ভুল ছিল না।
বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের কৃষক এমদাদুল হক দুলু বলেন, আমার বাড়িতে দুটি কমলা গাছ আছে, অল্প কিছু ফল ধরেছে। পলাশের বাগান দেখতে এসে অবাক হয়েছি- এত কমলা এই মাটিতেও ফলতে পারে! কয়েকটি কমলা খেয়েছি, স্বাদে দারুণ সুমিষ্ট।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, পলাশ হোসেন এই অঞ্চলে কমলা চাষকে জনপ্রিয় করার পথ তৈরি করেছেন। তার উদ্যোগ দেখে এখন অনেক কৃষক কমলা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সাবাব ফারহান আরও বলেন, পলাশের বাগান এখন স্থানীয় কৃষকদের জন্য যেন একটি অপ্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণকেন্দ্র। প্রতিদিনই আশপাশের গ্রাম থেকে কৃষকরা তার বাগান দেখতে আসেন, ফলন দেখেন, চাষপদ্ধতি শিখে যান। কেউ কেউ নিজেদের জমিতেও কমলা চাষের পরিকল্পনা করছেন।

মিঠু হাসান, নওগাঁ (বদলগাছী-মহাদেবপুর)