সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন কেন পুনর্বিবেচনা নয়, জানতে চেয়ে রুল
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন কেন পুনর্বিবেচনা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের বেতন, পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা কেন পুনর্বিবেচনা করা হবে না, এ বিষয়ে সরকারের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে আদালত আরও জানতে চেয়েছেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩ কেন অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না।
আজ সোমবার (২৪ নভেম্বর) দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের বিচারকদের তুলনায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্ট বিচারকদের আর্থিক অবস্থান নিম্নস্তরে রয়েছে—এ কথা উল্লেখ করে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের নির্দেশনা চেয়ে করা এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সিকদার মাহমুদুর রাজি ও বিচারপতি রাজিউদ্দিন আহমেদের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
গত ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী ও চারজন আইনের শিক্ষার্থীর পক্ষে এ রিট আবেদন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
রিটে বিচারকদের বেতন ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্য প্রণীত দুটি আইনের সাংবিধানিক বৈধতাও চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। এই আইন দুটি হলো—বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২১ এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক (ছুটি, পেনশন ও বিশেষাধিকার) আইন, ২০২৩।
রিটকারীরা হলেন—সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, আবদুল্লাহ সাদিক, মো. মিজানুল হক, আব্দুল ওয়াদুদ, রহিম উল্লাহ, আমিনুল ইসলাম শাকিল, ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ, শিক্ষানবিশ আইনজীবী সাব্বির রহমান, মাহমুদুল হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া, শামিম সাহিদ, মো. রাফিউল সাব্বির ও হাবিবুর রহমান আল হাসান।
রিট আবেদনে বলা হয়েছে, অন্যান্য দেশের শীর্ষ আদালতের আদলে সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব প্রশাসনিক কাঠামোর অধীনে ল ক্লার্ক কাম–রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হোক, যেন সর্বোচ্চ আদালতের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
আইনজীবী শিশির মনির বলেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ। সংবিধানের ৯৪(৪) ও ১৪৭(২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা সংবিধান প্রদত্ত অধিকার।
রিটে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর বিচারপতিদের বেতনের তথ্য তুলে ধরে জানানো হয়, ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় তিন দশমিক ৮৯ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের বেতন প্রায় তিন দশমিক ৪৭ লাখ টাকা; পাকিস্তানে প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় ৫ দশমিক ১৭ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের বেতন প্রায় চার দশমিক ৭৪ লাখ টাকা; ভুটানে প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় এক দশমিক ৯১ থেকে দুই দশমিক ১০ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের বেতন সর্বোচ্চ প্রায় এক দশমিক ৮০ লাখ টাকা; মালদ্বীপে প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় সাত লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের প্রায় সাত দশমিক ৮৩ লাখ টাকা; শ্রীলঙ্কায় প্রধান বিচারপতির বেতন প্রায় এক দশমিক শূন্য ছয় থেকে এক দশমিক ৩৪ লাখ টাকা এবং অন্য বিচারকদের বেতন সর্বোচ্চ এক দশমিক ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির মাসিক বেতন মাত্র এক দশমিক ১০ লাখ টাকা, আপিল বিভাগে বিচারকের বেতন এক দশমিক পাঁচ লাখ টাকা এবং হাইকোর্ট বিচারকের বেতন ৯৫ হাজার টাকা। এই অসামঞ্জস্য শুধু আর্থিক নয়, বরং বিচার বিভাগের মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের মানের প্রতি সাংঘর্ষিক।

নিজস্ব প্রতিবেদক