সুপ্রশিক্ষিত আইনজীবী বিচার ব্যবস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ : প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, সুপ্রশিক্ষিত একজন আইনজীবী কার্যকর বিচার ব্যবস্থার একটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় স্তম্ভের ভূমিকা পালন করেন। সোমবার (২৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট ভবনের মিলনায়তনে কন্টিনিউইং প্রফেশনাল ডেভেলপমেন্ট (সিপিডি) ফর এডভোকেটস অ্যান্ড ডিজিটাল বিএলডি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম- এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, যখন আইনজীবীরা ধারাবাহিকভাবে তাদের জ্ঞান আপডেট করেন, তখন তাদের পড়ার মান উন্নত হয়, বিচার আরও স্পষ্টতার সঙ্গে এগিয়ে যায় এবং বিচারিক সময় আরও দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়। এসব কিছু সময়োপযোগী ন্যায়বিচার প্রদানে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে। তাই একজন সুপ্রশিক্ষিত আইনজীবী কেবল তার দেশের জনগণের জন্য একটি সম্পদই নন, বরং কার্যকর বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় স্তম্ভও বটে।
আরও পড়ুন : দেশি ৮১ পর্যবেক্ষক সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে ইসির সংলাপ আজ
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘এই অনুষ্ঠানটি এমন এক মুহূর্তে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশের আইনি ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্দেশ্যমূলক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল রূপান্তর, সীমান্তবর্তী অর্থনৈতিক কার্যকলাপ, তথ্য-প্রযুক্তি চালিত শাসনব্যবস্থা, সাক্ষ্য প্রমাণের নতুন রূপ ও আইনি বিশ্লেষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্রমবর্ধমান কেন্দ্রিকতার কারণে বাংলাদেশেও আইনি পেশা দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আমাদের এখন স্বীকার করতেই হবে যে আধুনিক, দক্ষ, জনকেন্দ্রিক ও বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতামূলক হতে চাওয়া বিচার ব্যবস্থার জন্য আইনি অনুশীলন, প্রশিক্ষণ ও আদালতের সঙ্গে জড়িত থাকার ঐতিহ্যবাহী মডেলগুলো আর যথেষ্ট নয়।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, আজকের সিপিডি উদ্যোগটি আমাদের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির গতিশীলতার প্রতিনিধিত্ব করে। গত প্রায় ১৬ মাস ধরে আমরা দীর্ঘমেয়াদি বিচারিক স্বাধীনতার দ্বৈত ভিত্তি হিসেবে প্রাতিষ্ঠানিক শক্তিশালীকরণ ও পেশাদার উন্নয়নের ওপর ধারাবাহিকভাবে জোর দিয়েছি। এই প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের অংশ হিসেবে বিচার বিভাগ একাধিক কার্যকরী উদ্যোগ চালু করেছে যা সরাসরি ন্যায়বিচারকে সহজলভ্য ও শক্তিশালী করে তুলবে।
এর মধ্যে রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট হেল্পলাইনস ও ন্যাশনওয়াইড জুডিসিয়াল হেল্পলাইনস। হাইকোর্ট বিভাগে কাগজ-মুক্ত বেঞ্চ। নির্বাচিত জেলাগুলোতে স্বয়ংক্রিয় মামলার কার্যতালিকা ও মামলার দ্রুত ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা।
সংস্কারকারী বিচার বিভাগকে গতিশীল করতে একটি রূপান্তরকারী বারের প্রয়োজন। অন্যথায়, বিচার ব্যবস্থা ভারসাম্যহীনতার দিকে এগিয়ে যায়। এই কারণেই আমাদের আইনজীবীদের জন্য আজকের সিপিডি প্রোগ্রামটি এত সময়োপযোগী ও অত্যন্ত অপরিহার্য বলে জানান প্রধান বিচারপতি।
ডিজিটাল বিএল প্রবর্তন এই উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে বলে নিজের আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধান বিচারপতি বলেন, এ উদ্যোগ শিক্ষা ও গবেষণাকে একটি ঐক্যবদ্ধ ডিজিটাল কাঠামোর মধ্যে স্থাপন করবে।
আরও পড়ুন : নিবিড় তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া, দেশবাসীর দোয়া কামনা
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান মো. আসাদুজ্জামান।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন— বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও বার কাউন্সিলের হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন— বার কাউন্সিলের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান ও সিনিয়র অ্যাডভোকেট মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন— আইন ও বিচার অঙ্গনের সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে আগত শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বার কাউন্সিলের অন্যান্য সম্মানিত সদস্যবৃন্দসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থার প্রতিনিধিগণ।

বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)