খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় যোগ দিলেন চীনের আরও চার চিকিৎসক
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মেডিকেল বোর্ডকে সহায়তা দিতে চীন থেকে এসেছেন আরও চারজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বুধবার (৩ ডিসেম্বর) রাত ৯টার দিকে চীন থেকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন তারা। এরপর তারা সেখান থেকে সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।
বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বুধবার রাতে চীন থেকে আসা এই চারজন চিকিৎসক হলেন—চি জিয়ানফান, ইয়ান ঝি, ঝং ইউহি এবং ম্যাং হং ও। তারা রাত ১০টা ১০ মিনিটে এভারকেয়ার হাসপাতালে পৌঁছান।
খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত রয়েছেন দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিনস হাসপাতাল ও লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ড। গত ১ ডিসেম্বর এই মেডিকেল বোর্ডের সহায়তায় ঢাকায় আসেন চীনের পাঁচজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এ ছাড়া বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে যুক্তরাজ্য থেকে আসেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিয়েল।
আরও পড়ুন: ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত’
৮০ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস এবং কিডনি, লিভার, ফুসফুস ও চোখের বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। গত ২৩ নভেম্বর তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে নেওয়া হয়।
এভারকেয়ার হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। টানা এক সপ্তাহ ধরে তিনি সিসিইউতেই আছেন। বুধবার রাতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের সদস্য হেমাটোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নুরুদ্দীন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ম্যাডামের অবস্থা অপরিবর্তিত। আগের মতোই আছেন। উন্নতি বা অবনতি কোনোটাই বলা যাচ্ছে না।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। এ সময় তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে জামায়াত আমির সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আশা রাখি, দোয়া করি উনি (খালেদা জিয়া) সুস্থ হয়ে উঠবেন ইনশাল্লাহ। একইদিন বিএনপি চেয়ারপাসনকে দেখতে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান। রাত ৯টার দিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ও বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।
আরও পড়ুন: খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস প্রধান উপদেষ্টার
গত মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালের সামনে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও মেডিকেল বোর্ডের সদস্য ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, গত ২৭ নভেম্বর থেকে বেগম খালেদা জিয়া সিসিইউতে রয়েছেন। তিনি মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন।
ডা. জাহিদ হোসেন জানান, বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পাশাপাশি আমেরিকা (জনস হপকিন্স), ইউকে (লন্ডন ক্লিনিক) এবং চীনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ মেডিকেল টিমের অধীনে তাঁর চিকিৎসা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আল্লাহর অশেষ মেহেরবানীতে ডাক্তাররা যে চিকিৎসা দিচ্ছেন, সেটি উনি গ্রহণ করতে পারছেন। তবে এই সংকটময় মুহূর্তে তাঁর সুস্থতার জন্য আমরা দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দেশবাসীর দোয়া, সারা পৃথিবীর মানুষের উনার প্রতি ভালোবাসা ও দোয়ার কারণে হয়তো উনি এই যাত্রায় সুস্থ হয়ে উঠবেন বলে আমরা আশা করি।’
খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ডা. জাহিদ হোসেন স্পষ্ট করে বলেন, মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা তাঁকে (খালেদা জিয়া) নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছেন। মেডিকেল বোর্ড যখন মনে করবে, তখনই উনাকে যথাযথ সময়ে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়া হবে। রোগীর বর্তমান অবস্থা ও সর্বোপরি মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শের বাইরে এই মুহূর্তে কোনো কিছু করার সুযোগ নেই।
আরও পড়ুন: ‘খালেদা জিয়ার অবস্থা অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান’
সবাইকে ধৈর্য ধারণ করার এবং বেগম খালেদা জিয়া দ্রুত আরোগ্য লাভের জন্য প্রার্থনা করার আহ্বান জানান ডা. জাহিদ হোসেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক