ধর্মের নামে বিভাজনের পথ তৈরির চেষ্টা চলছে : মির্জা ফখরুল
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বাংলাদেশে একটি বিভাজনের পথ তৈরি করার চেষ্টা চলছে—ধর্মের নামে বিভাজন। আমরা ধর্মবিশ্বাসী মানুষ হলেও ধর্ম দিয়ে রাষ্ট্র বা সমাজকে বিভাজন করি না।
আজ রোববার (৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনিস্টিউটে এক অনুষ্ঠানের উদ্বোধনকালে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন। সাত দিনব্যাপী 'বিএনপির দেশ গড়ার পরিকল্পনা' শীর্ষক এ কর্মসূচিতে সমাপনী বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করছেন দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, চব্বিশের জুলাই গোটা বাংলাদেশের মানুষের মন-মানসিকতায় এবং তরুণ সমাজের মন-মানসিকতায় অনেক পরিবর্তন এনে দিয়েছে। এখন সবাই পরিবর্তন চায়। পরিবর্তন সর্বক্ষেত্রে চায়—রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে চায়, আমাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে চায়। আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। এই চিন্তাটি সকলের মধ্যে এসেছে। এসেছে এই উপলব্ধি থেকেও যে-সেই পুরনো রাষ্ট্র কাঠামো আর উপযোগী থাকছে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা উপযোগী থাকছে না, বিচার ব্যবস্থা উপযোগী থাকছে না। রাষ্ট্রের উন্নয়নের যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এতদিন যেভাবে চিন্তা করেছি, সেগুলো পিছিয়ে পড়েছে, সেগুলো দিয়ে কাজ হচ্ছে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার গত ১৫ বছরে তার দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আবার নতুন করে গড়ে তোলা, দেশকে গড়ে তোলা, এই চিন্তা আমাদের নেতা তারেক রহমানকে আলোড়িত করেছে।
বিএনপির মহাসিচব বলেন, আমাদের ছেলেরা অনুভব করে-পাশ করে চাকরি নেই। এই ১৫ বছরে তো চাকরি পাওয়াই যায়নি। সব জায়গায় ভরাট আওয়ামী লীগের দুঃশাসন। কিন্তু নতুন বাংলাদেশে আমরা কিভাবে এই সমস্যার সমাধান করব? ক্ষমতায় গেলে ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে। শুধু চাকরি নয়—ব্যবসা, কৃষিকাজ, শ্রম—সব মিলিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। এবং কিভাবে করা হবে—তা ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা প্রমাণ করে—বিএনপি একটি এডভান্স রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের যা কিছু ভালো অর্জন হয়েছে—অতীতে বিএনপিই করেছে। আবার নতুন বাংলাদেশ গড়ে তোলার ব্যাপারেও বিএনপি নতুন চিন্তাভাবনা সামনে নিয়ে আসছে। শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষক। দুর্ভিক্ষপীড়িত দেশ, একদলীয় শাসন—সেখান থেকে তিনি বহুদলীয় ব্যবস্থা চালু করেছিলেন। আধুনিক রাজনৈতিক দল গঠনের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। তার বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের দর্শন বাংলাদেশের মূল ভিত্তি রচনা করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া, ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেওয়া, মিডিয়ার স্বাধীনতা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা—সবই জিয়াউর রহমান শুরু করেছিলেন। আজকের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ভিত্তিও তিনি নির্মাণ করেছিলেন। প্রবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্সের পথ তিনিই খুলেছিলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমরা কেউই খুব আনন্দিত থাকতে পারছি না—আমরা ভারাক্রান্ত। কারণ আমাদের নেত্রী গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। তার চিকিৎসার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নিজে মনিটর করছেন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা তার চিকিৎসা করছেন। সারা দেশের মানুষ তার জন্য দোয়া করছে। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহ নিশ্চয়ই এত মানুষের দোয়া কবুল করবেন।

নিজস্ব প্রতিবেদক