‘তফসিল ঘোষণায় গণ-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হবে, পরবর্তী চ্যালেঞ্জ সুষ্ঠু নির্বাচন’
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের গণ-আকাঙ্ক্ষা পূরণের একটি ধাপে আমরা উপনীত হচ্ছি। এরপর বড় চ্যালেজ্ঞ হলো নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ হওয়া। নির্বাচন কমিশন, সরকার, রাজনৈতিক দল ও জনগণ—সব স্টেকহোল্ডারকে কম্বাইন্ডলি ফেস করে এই চ্যালেজ্ঞ মোকাবিলা করতে হবে।
আজ বুধবার (১০ ডিসেম্বর) খুলনা-৫ আসনের ডুমুরিয়া উপজেলা শরাফপুর ইউনিয়নের মাদারতলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত সজিব রায়ের পরিবারকে সমবেদনা জ্ঞাপন এবং আহত শিমুল মন্ডল, তনয় মন্ডল ও সাগর মন্ডলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে চিকিৎসার সার্বিক খোঁজখবর নিয়ে আর্থিক সহায়তা করে এলাকায় গণসংযোগকালে এসব কথা বলেন জামায়াত সেক্রেটারি।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, একটা দল যারা নিজেদের বড় মনে করে। ভোটের আগেই মনে করে ক্ষমতায় চলে গেছি। আমরা নির্বাচনি এলাকায় প্রচারণায় গিয়ে নানা আশঙ্কার কথা শুনতে পাচ্ছি। তারা এবার ভোটকেন্দ্রে যেতে দেবে না। ভোট দিতে বাধা দেবে। ব্যালটে বাইরে এনে সিল মেরে দেবে। চব্বিশের আগস্টেই আমরা সেই বাংলাদেশকে বিদায় দিয়েছি। সেই বাংলাদেশ আর আমরা দেখতে চাই না। ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ এ জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেনি। আমরা এখন জনগণকে সচেতন করছি। আমরা জামায়াতের পক্ষ থেকে প্রশাসনকে লিখিতভাবে জানিয়ে এসেছি, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। ভোটগ্রহণের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবাইকে পক্ষপাতহীন হতে হবে।
এদিন সকালে খুলনা-৫ আসনের ফুলতলা উপজেলাধীন শিরোমণির ডাকাতিয়া পশ্চিম পাড়ায় অনুষ্ঠিত ভোটার সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী দেশের সব ধর্ম, বর্ণ-গোত্রের মানুষের কাছে সবচেয়ে আস্থার দলে পরিণত হয়েছে। জামায়াত ঘোষিত ন্যায় ও ইনসাফের দেশ গড়তে হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টানসহ সব সম্প্রদায়ের মানুষ আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আর এই ঐক্যবদ্ধ হওয়াটা কেউ কেউ মেনে নিতে পারছে না। কোথাও কোথাও হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। এই হুমকি-ধমকির মানে হলো কর্তৃত্ববাদী শাসনের অবসান হলেও কেউ কেউ আবার কর্তৃত্ববাদী শাসন ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এই ধরনের অপচেষ্টা আগামী নির্বাচনে জনগণ ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে রুখে দেবে।
বিভিন্ন সময়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর জুলুম নির্যাতনের কথা তুলে ধরে গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে একটি দল আপনাদের শুধু তাদের ভোটবাক্স হিসেবে ধরত। তারা আপনাদের ভোট নিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে আবার আপনাদের বাড়িঘর দখল, ঘের দখলসহ বিভিন্ন ধরনের জুলুম নির্যাতন চালিয়েছিল। বর্তমানে আরেকটি দল পুরোনো ধাঁচে আপনাদের ভাবতে শুরু করেছে। আগস্ট পরবর্তী সময়ে আপনাদের ওপর বিভিন্ন প্রকার জুলুম নির্যাতন তারা করছে। কিন্তু আপনারা কি বলতে পারবেন, দেশ স্বাধীনের পর থেকে জামায়াতের কেউ আপনাদের ওপর জুলুম, নির্যাতন, নিষ্পেষণ চালিয়েছে? যখনই সুযোগ পেয়েছে জামায়াত আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তাই আগামী নির্বাচনে সকল হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে আপনারা পাড়া মহল্লায় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে দাড়িপাল্লার পক্ষে ভোট চাইবেন। তাহলে জামায়াত ঘোষিত নতুন বাংলাদেশে আপনারা সবচেয়ে বেশি ভালো থাকতে পারবেন, সবচেয়ে বেশি নিরাপদ থাকতে পারবেন, যেমনটি ছিল খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগে অমুসলিমরা।
চিত্তরঞ্জন গাইনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন খুলনা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মুন্সী মিজানুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি মুন্সী মঈনুল ইসলাম, অধ্যাপক মিয়া গোলাম কুদ্দুস ও প্রিন্সিপাল গাওসুল আযম হাদী, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য হাফেজ আমিনুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আবু ইউসুফ মোল্যা।
মানষ রায়ের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন মনিলাল মন্ডল, কালীপদ গাইন, নিতাই চন্দ্র মন্ডল, প্রণব রায়, খোকন চন্দ্র রায় প্রমুখ। এ সময় এলাকাবাসীর কাছে সাম্প্রতিক সময়ে পাশ হওয়া শিরোমণির চিংড়ীখালি মোড় থেকে ডাকাতিয়ার পশ্চিম পাড়া পর্যন্ত রাস্তা কার্পেটিংয়ের খোঁজখবর নেন।

মুহাম্মদ আবু তৈয়ব, খুলনা