২৩ মাস পর যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন শুরু
গ্যাস সংকটে দীর্ঘ ২৩ মাস বন্ধ থাকার পর দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইউরিয়া সার উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান জামালপুরের যমুনা সার কারখানায় উৎপাদন শুরু হয়েছে। গত ২৪ নভেম্বর গ্যাস সরবরাহ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক ও কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উৎপাদন শুরু করে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
কারখানা সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১৫ জানুয়ারি সংকটের কারণে কারখানায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। গ্যাস সংকটে ১৩ মাস ২৩ দিন কারখানার উৎপাদন বন্ধ থাকার পর চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ শুরু করে তিতাস। পরের দিন ১৪ ফেব্রুয়ারি চুল্লিতে গ্যাস সংযোগ বা ফায়ারিংয়ের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কারখানা চালু করা হয়। এরপর ২৩ ফেব্রুয়ারি বিকেল থেকে সার উৎপাদন শুরু হয়ে মাত্র চার দিনের মাথায় কারখানার অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখিয়ে ফের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ থাকে কারখানা। দীর্ঘ ২৩ মাস পর চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর পুনরায় গ্যাস সরবরাহ শুরু করে তিতাস। গ্যাসের চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সার উৎপাদনের প্রস্তুতি নেয় কারখানা কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় যান্ত্রিক ও কারিগরি ত্রুটি সারিয়ে দুই সপ্তাহ পর পুরোদমে উৎপাদন শুরুর কথা ছিল। তবে সব প্রস্তুতি শেষ করে উৎপাদন শুরু হতে সময় লাগল এক মাস।
কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের জন্য দৈনিক ৪২ থেকে ৪৫ পিএসআই গ্যাসের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে গ্যাসের চাপ রয়েছে ৯ থেকে ১০ পিএসআই। এতে উৎপাদন নেমে এসেছে ৪৫ শতাংশে। গ্যাসের চাপ স্বল্পতার কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি যান্ত্রিক ত্রুটিও দেখা দিতে পারে।
যমুনা সার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন জানান, গ্যাস সংযোগ পাওয়ার পর আজ থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে গ্যাসের চাপ কম থাকায় উৎপাদন কম হচ্ছে। পুরোদমে উৎপাদন অব্যাহত রাখার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিসিআইসি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে গ্যাসের চাপ স্বল্পতার বিষয়টি তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানিকে জানানো হয়েছে।
বাংলাদেশ রাসায়নিক শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন কেপিআই-১ মানসম্পন্ন যমুনা সার কারখানাটি প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে দৈনিক এক হাজার ৭০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন করে আসছিল। জামালপুর, শেরপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ১৯ জেলায় প্রায় আড়াই হাজার সার ডিলারের মাধ্যমে কৃষক পর্যায়ে সার সরবরাহ করা হয়। কিন্তু উৎপাদন বন্ধ থাকায় সার ডিলার, স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা গ্যাস সংযোগ দিয়ে উৎপাদনে যাওয়ার জন্য দাবি জানিয়ে আসছিল। যমুনায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিদেশ থেকে আমদানি করা ইউরিয়া সার এনে ডিলারদের মাধ্যমে কৃষকদের কাছে সরবরাহ করা হয়। এতে আমদানি খাতে বিপুল টাকা গচ্চা দিতে হয় সরকারকে। দীর্ঘ ২৩ মাস ধরে কারখানা বন্ধ থাকায় উৎপাদন ক্ষতি দাঁড়িয়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা।

আসমাউল আসিফ, জামালপুর