আজহারীকে কেন গ্রেপ্তার করা হলো না, সংসদে মেননের ক্ষোভ

Looks like you've blocked notifications!
জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী (ডানে) এবং সোমবার জাতীয় সংসদে বক্তব্য দেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ছবি : সংগৃহীত

জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মিজানুর রহমান আজহারীকে কেন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনে গ্রেপ্তার করা হলো না মন্তব্য করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। ঢাকা-৮ আসনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মেনন বলেন, ওয়াজ মাহফিলে জামায়াত এবং সাঈদীর পক্ষে কথা বলতেন আজহারী। তবু তাঁকে কেন গ্রেপ্তার না করে মালয়েশিয়ায় পার করে দেওয়া হলো?

গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবের সাধারণ আলোচনায় অংশ নিয়ে এ কথা বলেন রাশেদ খান মেনন।

রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু এই দেশকে ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি উপহার দিয়েছিলেন। ধর্ম নিয়ে রাজনীতি, ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজনের বিরুদ্ধে তিনি কেবল সোচ্চার ছিলেন না, এ ব্যাপারে তিনি কঠোর পথ অবলম্বন করেছিলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ধর্মের ব্যাপারে কাউকে যদি আঘাত দেওয়া হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমিও তাঁর সঙ্গে একমত।’

স্পিকারের উদ্দেশে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘ইউটিউবে যেসবের মাধ্যমে ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানো হয়, সেগুলো পেনড্রাইভে করে আপনার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, আমি জানি না। কিন্তু আমি জানি, আজকে ধর্মমন্ত্রী যেখানে বলেন, সাঈদীর পক্ষে দাঁড়িয়ে ওয়াজ করে মিজানুর রহমান আজহারী সারা বাংলাদেশে ঘুরে বেড়ান, তিনি জামায়াতের পক্ষে কাজ করছেন। তাঁকে কেন আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার করা হয় না? বরঞ্চ নির্বিঘ্নে তাঁকে মালয়েশিয়ায় পার করে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বাউল শরীয়তীকে (শরীয়ত বয়াতি) আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়।’

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের ভাবতে হয়, আমাদের আবার পাকিস্তানি, জামায়াতি ও ওয়াহাবি প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করার জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হচ্ছে কি না। মাননীয় স্পিকার, যদি তা না হতো, তাহলে আজহারী দেশ ছেড়ে যেতে পারত না। তা না হলে খতমে নবুওত নতুন করে হুমকি দিতে পারত না। হেফাজত সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দিতে পারত না। আমি জানি না কখন থেকে তারা সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। এরাই কয়দিন পর সংসদে ব্লাসফেমি আইন করতে বলবে। যেমন করে সেদিন সাঈদী সংসদে এমন আইন পাস করার জন্য এনেছিল।’

এর আগে ‘পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে’ বাংলাদেশে এ বছরের তাফসির প্রোগ্রামের ইতি টানতে হয় মিজানুর রহমান আজহারীকে। তাই মার্চ পর্যন্ত তাঁর বাকি প্রোগ্রামগুলো স্থগিত করা হয়। গবেষণার কাজে আবারও মালয়েশিয়া ফিরতে হয় পিএইচডিতে অধ্যয়নরত আজহারীকে।

গত ৬ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এসব কথা লিখেন আজহারী।

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি তাঁকে ‘জামায়াতের প্রোডাক্ট’ আখ্যা দিয়ে সামাজিকভাবে প্রতিহত করার আহ্বান জানান ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। পরের দিন সেই বক্তব্যের জবাব দিয়ে স্ট্যাটাস দেন আজহারী। তিনি বলেন, “আমি কোনো দলের এজেন্ট বা প্রোডাক্ট নই। আর কোনো রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে আমার শিক্ষাজীবনও কাটেনি। মিথ্যাচার যেন এ দেশে মহামারিতে রূপ নিয়েছে। আর সেটা যখন প্রকাশ্যে, গণমাধ্যমে, দেশের কোনো উচ্চপদস্থ দায়িত্বশীলের মুখ থেকে প্রকাশ পায়, তখন আফসোস আর হেদায়েতের দোয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।’

“নিজের চিন্তা আর মতের বিরুদ্ধে গেলেই এ দেশে একটা স্বস্তা ট্যাগ লাগিয়ে দেওয়া হয়। আর সেটা হলো ‘জামায়াত-শিবির’। এবার আপনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হোন অথবা মনেপ্রাণে একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক হোন। দ্যাট ডাজেন্ট মেটার। ভিন্নমতকে দমনের এই অপকৌশল পুরো জাতির ভাগ্যে ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।”