‘শাবিপ্রবির শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানোর প্রক্রিয়াগুলো নিষ্ঠুর ও দানবীয়’
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে থামানোর প্রক্রিয়াগুলো অমানবিক, নিষ্ঠুর ও দানবীয় বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
আট দিনের মাথায় অনশন ভেঙেছেন উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনশনরত শাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের আজ বুধবার সকালে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙান বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তবে, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে ঢাকা থেকে রওনা হয়ে সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পৌঁছান ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল এবং তাঁর স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক। ভোরে অনশনরত শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছান তিনি। এ সময় অনেক শিক্ষার্থী তাঁকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থার খোঁজ নেন ড. জাফর ইকবাল। যাঁরা হাসপাতালে ছিলেন, সকালে তাদেরকেও অনশনস্থলে আনা হয়। পরে, পানি পান করিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙান। এ সময় অনশনরত শিক্ষার্থীদের শারিরীক অবস্থা জটিল হওয়ার পরেও মেডিকেল সাপোর্ট বন্ধের কড়া সমালোচনা করেন জাফর ইকবাল। শিক্ষার্থীদের ভিসি অপসারণের দাবি শতভাগ যৌক্তিক বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শাবিপ্রবির সাবেক অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘...সকালবেলা সবাই মিলে অনশন ভঙ্গ করেছে। তারা আমাদের অনুরোধ রক্ষা করে আজ সকালে সবাই মিলে অনশন ভঙ্গ করেছে। আমি আমার জীবনে এর থেকে বেশি আনন্দ কখনও পাইনি। আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।’
“যেহেতু আপনারা আমাকে অনুরোধ করেছেন যে, ‘আমরা সব মেনে নেব, আপনি গিয়ে এ ছেলেমেয়েগুলোকে অনশনের হাত থেকে রক্ষা করুন।’ আমি সে দায়িত্ব পালন করেছি”, যোগ করেন ড. মুহাম্মদ জাফর ইকবাল।
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থামানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রক্রিয়ার নিন্দা জানান অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলছি—এ ছেলেমেয়েদের আন্দোলনকে থামানোর জন্য যে প্রক্রিয়াগুলো নেওয়া হয়েছে, সেটা অমানবিক, নিষ্ঠুর, দানবীয়।’
এদিকে, অনশন ভাঙলেও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র সাংবাদিকদের বলেন, ‘...আমাদের যে দাবি-দাওয়াগুলো আছে, সেগুলো পূরণ করে দেওয়া হবে। উনারা (অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল এবং অধ্যাপক ইয়াসমিন হক) আমাদের কাছে অসম্ভব শ্রদ্ধেয় মানুষ। আমরা উনাদের কথা বিশ্বাস করি। এবং তাঁদের কথা বিশ্বাস করেই আমরা আজ অনশন ভেঙেছি... আন্দোলনটা তো আসলে ভিসির পদত্যাগের আগপর্যন্ত চলার কথা আমরা আগে থেকেই ঘোষণা করেছি, আমরা আপাতত অনশন কার্যক্রমটি বন্ধ করে রাখছি। কিন্তু, আমাদের অন্যান্য আন্দোলন কার্যক্রম চলবে। আমরা হয়তো বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব। এটা অবস্থান কর্মসূচি হতে পারে, মশাল মিছিল হতে পারে। এটা আমরা পরবর্তীকালে সিদ্ধান্ত নিয়ে আপনাদের জানিয়ে দেব।’
১৯ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে বসেন ২৪ শিক্ষার্থী। পরে তাঁদের সঙ্গে আরও কয়েক শিক্ষার্থী অনশনে বসেন।