সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও মিছিলে সরব থাকবেন কোটাবিরোধীরা, আইন পাস না করা পর্যন্ত আন্দোলন
বাংলা ব্লকেডে আজ আজ বৃহস্পতিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ছিল আন্দোলনে উত্তাল। কুমিল্লায় পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আহতের ঘটনাও ঘটেছে। আর রাজধানী ঢাকায় সায়েন্স ল্যাব ও নিউমার্কেটে অবস্থান নিতে না পরলেও বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শাহবাগ-হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ছিল কোটাবিরোধীদের দখলে। নিজেদের অবস্থান ছাড়ার সময় তারা জানালেন, আগামীকাল শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও আন্দোলনে থাকবেন তারা। যদিও এদিন বিকেলে তারা দেশব্যাপী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে করবেন বিক্ষোভ মিছিল।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ হামলা চালিয়েছে। কোটা সংস্কারের দাবির পাশাপাশি এই হামলার প্রতিবাদে আগামীকাল বিকেল ৪টায় সব ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হবে। তিনি আরও বলেন, সংসদে জরুরি অধিবেশন ডেকে কোটার যৌক্তিক সংস্কার করে চূড়ান্তভাবে কোটা সমস্যার সমাধান করতে হবে। শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি নয়, সব সরকারি চাকরিতে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জন্য ৫ শতাংশ কোটা রেখে বাকি সব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে।
কোটা বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই আন্দোলনে আছেন শিক্ষার্থীরা। এরপর গত ৭ জুলাই থেকে 'বাংলা ব্লকেড' নামে এই অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। আজ রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট অবরোধ করতে গেলে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন কোটাবিরোধীরা। তবে, শাহবাগ থেকে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল পর্যন্ত দখলে রাখেন তারা। এমনকি, তাদের চাপে ভেঙে যায় পুলিশি ব্যারিকেড। যদিও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়েই দাবি আদায়ের কথা জানান কোটাবিরোধীদের সমন্বয়করা।
তবে, বাড়তি সতর্কতায় আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ শুরু থেকেই সাঁজোয়া যান ও জলকামান নিয়ে তৈরি ছিল পুলিশ। যদিও ব্যারিকেড ভেঙে কোটাবিরোধীরা এগোতে থাকলে পেছাতে শুরু করে এসব যান। পরে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান নিলে সেখানে পৌঁছে আন্দোলনরতরা সাঁজোয়াযানের ওপরে অবস্থান নেন। সেখান থেকে স্লোগান দিতে থাকেন। তারপরও পুলিশ নীরবতা পালন করে।
এদিকে, গতকাল বুধবার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ। এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। তবে, শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
আজ কোটাবিরোধীরা মাঠে নামলে জানা যায়, ২০১৮ সালে মুক্তিযোদ্ধা বাতিলে পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায়ের মূল অংশ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে বলা হয়েছে, সরকার চাইলে কোটা পরিবর্তন, পরিবর্ধন করতে পারবে। কোটা পূরণ না হলে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে পারবে। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেন।
এদিকে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কোটাবিরোধী আন্দোলনের সমালোচনা করে বলেছেন, শিক্ষার্থীদের মাঠের এ আন্দোলনকে ব্যবহার করে পানি ঘোলা করার চেষ্টা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা লিমিট ক্রস করে যাচ্ছেন।