অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ
সারা দেশে সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। গতকাল মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতে সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের দেওয়া চিঠিতে এই তথ্য জানানো হয়। যদিও ইউজিসির এই আদেশ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। তাদের এই এখতিয়ার আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এরপর দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
এখন পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা ও শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ইউনিভার্সিটি, ময়মনসিংহ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের শিক্ষার্থীদের সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলও দ্রুত ছাড়তে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার (১৭ জুলাই) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। উপাচার্য এএসএম মাকসুদ কামালের কার্যালয়ে এ জরুরি সভা শুরু হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের গতকাল মঙ্গলবার সারা দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে তিন জেলায় প্রাণ হারান ছয়জন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সহিংস রূপ নেওয়ায় গতকাল দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অধিভুক্ত কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করবে বলে বলা হয়।
ইউজিসির সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মোতাবেক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজগুলো শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
কিন্তু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেরাই নেয়। ঢাবি বন্ধ হবে কি না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ফোরাম সিন্ডিকেটের জরুরি সভা হয়। প্রথম দফায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। পরে উপাচার্যের বাসভবনে সিন্ডিকেটের দ্বিতীয় দফা বৈঠক হয়। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।