সিটি ও ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষ, ১২৫০ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা
সাভারে সিটি ইউনিভার্সিটি এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় আশুলিয়া থানায় অবশেষে পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় দুটি।
সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার আফতাব উদ্দীন আহমেদ খান বাদী হয়ে অজ্ঞাত এক হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে আজ বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে মামলাটি দায়ের করেন। অপরদিকে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফতাব উদ্দীন আহমেদ খান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২৫০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
সিটি ইউনিভার্সিটির মামলায় বেআইনি জনতাবদ্ধে অনধিকার প্রবেশ করে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টিসহ মারাত্মক জখম, ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন, চুরি ও বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ডিআইইউ শিক্ষার্থীরা সিটি ইউনিভার্সিটির প্রধান ফটকে নিরাপত্তায় থাকা গার্ডদের গুরুতর আঘাত করে। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশে ব্যর্থ হয়ে তারা গ্রাউন্ডিং মেশিন দিয়ে পার্শ্ববর্তী ওয়াল কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে প্রবেশ করে পেট্রোল বোমা, হাত বোমা নিয়ে হামলা চালায়। তাদের পরিবহণের পাঁচটি বাস ভাঙচুর করা হয়, যার মধ্যে তিনটি বাস সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এছাড়া, তিনটি মাইক্রোবাস, একটি প্রাইভেটকার ও দুটি মোটরসাইকেল বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, দুষ্কৃতকারীরা প্রশাসনিক ভবনে ঢুকে ভিসি অফিস, প্রো-ভিসি অফিস, ট্রেজারার অফিস, রেজিস্ট্রার অফিসসহ সমস্ত কক্ষের দরজা ভেঙে আসবাবপত্র, কম্পিউটার, প্রিন্টার, স্ক্যানারসহ যাবতীয় জিনিস ভাঙচুর করে। দামি জিনিসপত্র লুটপাট করা হয় এবং গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। ইউনিভার্সিটির হিসাব শাখা থেকে নগদ আনুমানিক ১৫ লাখ টাকা দস্যুতার মাধ্যমে চুরি করা হয়। একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের বিভিন্ন তলার জানালার থাই, এসি, বাথরুমের হাই কমোডসহ কোনো কিছুই হামলাকারীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সিটি ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে প্রাথমিকভাবে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২০ কোটি টাকা বলে দাবি করা হয়েছে।
এজাহারে আরও বলা হয়, হামলাকারীরা বেআইনিভাবে ড্রোন ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থাপনা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণ করে এবং এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মানচিত্র থেকে সিটি ইউনিভার্সিটির নাম নিশানা মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র। মূল একাডেমিক ভবন ধ্বংসে কিছু ছাত্র বাধা দিতে গেলে তাদের ওপর হামলা হয় এবং এই আঘাতে সিটি ইউনিভার্সিটির শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
অন্যদিকে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পক্ষে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা আফতাব উদ্দীন আহমেদ খান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ২৫০ শিক্ষার্থীকে আসামি করে পাল্টা মামলা দায়ের করেন। মামলায় পরস্পরের যোগসাজশে বেআইনি জনতাবদ্ধে দাঙ্গা-হাঙ্গামা সৃষ্টি করে অবৈধ আটকের মাধ্যমে অসত্য বিভ্রান্তিকর বক্তব্য দিতে বাধ্য করা, মারপিট করে সাধারণ ও গুরুতর জখম করাসহ ক্ষতিসাধন করার অভিযোগ আনা হয়।
আরও পড়ুন : প্রশান্ত মহাসাগরে চারটি মাদকবাহী নৌকায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ১৪
মামলায় বলা হয়, সিটি ইউনিভার্সিটির একজন শিক্ষার্থী ইচ্ছাকৃতভাবে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর গায়ে থুতু ফেলে। এই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিটি ইউনিভার্সিটির একদল ছাত্র অস্ত্র, ইটপাটকেল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস’ নামক হোস্টেলে অতর্কিত আক্রমণ করে, অত্যাচার করে ও সম্পদ ভাঙচুর করে।
এ হামলায় ড্যাফোডিলের ১৫০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আহত হন, যার মধ্যে অনেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এজাহারে আরও অভিযোগ করা হয়, হামলার পর সিটি ইউনিভার্সিটির একটি গোষ্ঠী ড্যাফোডিলের ১১ ছাত্রকে জিম্মি করে সারারাত আটক রাখে এবং অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায়, অমানবিক নির্যাতন ও মনস্তাত্ত্বিক ভয় দেখিয়ে অসত্য বক্তব্য দিতে বাধ্য করে।
আরও পড়ুন : ‘নির্বাচনের প্রতিশ্রুতিতে ব্যত্যয় ঘটলে প্রধান উপদেষ্টাকে তার দায় নিতে হবে’
ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষ মনে করে, সিটি ইউনিভার্সিটির ভেতরে ভাঙচুর, গাড়ি পোড়ানো ও সহিংস দৃশ্য সাজানো হয়েছে এবং ঘটনার ভিডিও ও ছবি পরিকল্পিতভাবে ধারণ করে পরবর্তীতে মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিকৃতভাবে প্রচার করা হয় মূল অপরাধীদের আড়াল করার জন্য। তাদের দাবি, সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছে এবং দুষ্কৃতকারী বা স্বার্থান্বেষী মহলের অর্থ আত্মসাৎ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।
সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জানান, উভয় পক্ষ থানায় অভিযোগ করেছে। পুলিশ তা মামলা হিসেবে রেকর্ড করেছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত রোববার সন্ধ্যায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে কথা-কাটাকাটির জেরে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় ৭ ঘণ্টার সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। হামলা চালিয়ে সিটি ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও তছনছ করা হয় এবং পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি গাড়ি। সংঘর্ষের সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা অন্তত ১০টি যানবাহন ভাঙচুর ও পাঁচটিতে অগ্নিসংযোগ করেন।

জাহিদুর রহমান