নৌকার পক্ষে বৈঠক, ৩৫ শিক্ষককে নির্বাচনি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি
মাদারীপুর-৩ (কালকিনি-ডাসার ও সদরের একাংশ) আসনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের নিয়ে নৌকার পক্ষে বৈঠক করায় ৩৫ শিক্ষককে তাঁদের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সকাল ৯টার দিকে মাদারীপুর-২ (রাজৈর ও সদরের একাংশ) আসনের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সংসদ সদস্য শাজাহান খানের নিজ বাসভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এই সভায় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউপি চেয়ারম্যানরাও উপস্থিত ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই সভার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।
আজ মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) বিষয়টি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমদ আলী নিশ্চিত করেছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিন মিনিট তিন সেকেন্ডের ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, মাদারীপুর-৩ আসনে ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পাওয়া শিক্ষকদের উদ্দেশে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ও সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খানে ছোট ভাই ওবায়দুর রহমান খান বক্তব্য দিচ্ছেন। এ পাশে বসা ছিলেন শাজাহান খান নিজেই।
ওবায়দুর রহমান খানকে তাঁর বক্তব্য বলতে শোনা গেছে, আপনাদের প্রাণপ্রিয় নেতা শাজাহান খান প্রধানমন্ত্রী দ্বারা নির্দেশিত হয়েছেন যে তিনের (মাদারীপুর-৩) গুরুত্ব দেওয়ার জন্য এবং তিনের প্রচার চালানোর জন্য। সেই হিসেবে আমরা কিন্তু তিনের উপরে বেশি দায়িত্ব পালন করতেছি। আপনারাও তিনে সেভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তিনে যদি আমার গোলাপ ভাইকে নির্বাচিত করতে পারি। তাহলে দাদায় (শাজাহান খান) ও গোলাপ ভাই মিলে দীর্ঘদিনের জন্য মাদারীপুরকে স্থিতিশীলতায় নিয়ে আসতে পারবেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন শিক্ষক বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে সভার কথা বলে উপজেলা চেয়ারম্যান হঠাৎ আমাদের তাদের বাসায় ডেকেছেন। তিনি আমাদের মাদারীপুর সদর উপজেলা শিক্ষক সমাজের সভাপতি। সভাটি হওয়ার কথা ছিল উপজেলা পরিষদে। কিন্তু সেটা না হয়ে এমপির (শাজাহান খানের) বাসায় হয়েছে।
এই বিষয়ে মাদারীপুর-৩ আসনের স্বতন্ত্রপ্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থক ও কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুজ্জামান শাহিন বলেন, মাদারীপুর-২ আসনের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শাজাহান খান তাঁর নির্বাচনি এলাকার পছন্দের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রিজাইডিং ও পোলিং এজেন্ট করার অপচেষ্টা করছেন। যেহেতু সদর উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন আমাদের মাদারীপুর-৩ আসনের মধ্যে পড়েছে। তাই সেখানে নিজের প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছেন। আমরা ইতোমধ্যে শাজাহান খানের নির্বাচনি এলাকার কোনো লোককে প্রিসাইডিং ও পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ করা যাতে না হয়, সেই জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছি। আর ২৫ ডিসেম্বর শাজাহান খানের বাসায় যেসব শিক্ষককে নিয়ে মিটিং করেছে, তারা সবাই শাজাহান খানের কর্মী। তাঁরা নির্বাচনে কোনো দায়িত্ব পালন করলে সেখানে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করবেন। তাই তাঁদেরসহ আরও যারা আছে, সবাইকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্য কোথাও থেকে পোলিং ও প্রিজাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হলে আশা করি নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে।
এই বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুদ করিম বলেন, যারা ওই মিটিংয়ে ছিলেন আমাদের জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাঁদের সবাইকে শোকজ করেছেন। এ বিষয়ে স্যার ভালো বলতে পারবেন।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আহমদ আলী জানান, বিষয়টি রিটার্নিং অফিসারের নজরে আসার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করা হয়েছে এবং আগামী দুদিনের মধ্যে তদন্ত করে সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকদের নির্বাচনের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।