ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে জোর করা হচ্ছে না : সিইসি
ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে জোর করা হচ্ছে না জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, আমরা প্রায় ছয়শ’র মতো অভিযোগ পেয়েছি। তার মধ্যে প্রায় চারশ’র মতো অভিযোগ নথিভুক্ত করেছি। নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে কি করণীয় বা কি পদক্ষেপ গৃহীতব্য, সেটা আমরা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদেরকে জানিয়েছি।
আজ বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এসব কথা বলেন।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা যারা আসবেন, তাদের জন্য এখানে বেশকিছু সুযোগ-সুবিধা থাকবে। গণমাধ্যমের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সব সময় কিন্তু স্বচ্ছতার কথা বলে আসি। নির্বাচন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার দৃশ্যমানতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে মূল দায়িত্ব পালন করবেন আপনারা (সাংবাদিক)। স্বচ্ছতা যদি তুলে ধরা যায় এবং বাস্তব অবস্থাটা সত্যি ইতিবাচক হয়, তাহলে বিভ্রান্তির সুযোগটা কম হয়। গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা যেটাকে ক্রেডিবিলিটি বলে, যেটা নিয়ে বিভিন্ন সময় একটা সঙ্কট হয়েছে; ওটার অপনোদন (দূরীকরণ বা অপসরণ) হতে পারে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, আমরা আশা করি আপনারা এখানে ও পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়বেন। গণমাধ্যমের কর্মী যারা আছেন, তারা অত্যন্ত আন্তরিকভাবে, বস্তুনিষ্ঠভাবে নির্বাচনের যে ভোট প্রক্রিয়া তার তথ্যগুলো সংগ্রহ করার চেষ্টা করবেন। আমরা বলেছি সব বস্তুনিষ্ঠ তথ্য, ভালো-মন্দ আমরা কিন্তু বাছবিচার করতে বলিনি। শুধু ভালোগুলো সম্প্রচার করবেন, মন্দগুলো করবেন না তা নয়। যাতে জনগণ একটা প্রপার জাজমেন্ট তৈরি করতে পারে, গণমাধ্যমের নিকট থেকে তথ্য প্রাপ্তির পর, সেজন্য আপনাদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সিইসি বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে বিদেশের যে মান্যবর রাষ্ট্রদূত আছেন, তাদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আমন্ত্রণ জানানোর কারণ হচ্ছে তারা সবসময় আমাদের নির্বাচন নিয়ে আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। আপনারা জেনেছেন বা দেখেছেন বিভিন্ন সময় তারা কিন্তু নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে এসে আমাদের সাথে মতবিনিময় করেছেন, তারা যে মতবিনিময়গুলো করেছেন তার মধ্যে মূলত সকলেরই একটি প্রত্যাশা ছিল এবং আছে এখনো; সেটি হলো আগামী নির্বাচনটা অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হবে। এই জিনিসটার ওপর তারা খুব জোর দিতে চান। আমরাও সেটাই চাই। আজকে যে সভাটির আয়োজন করেছিলাম, আমরা লাস্ট মোমেন্ট অবস্থাটা তাদেরকে ব্রিফ করেছি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, তারা দু-চারটি প্রশ্নও করেছেন তেমন কিছু নয়। যে প্রশ্নগুলো এসেছিল তার মধ্যে একটি হলো কম্প্লেইন কি পরিমাণ পাচ্ছি। আমরা তাদেরকে বুঝিয়েছি যে কম্প্লেইন বিভিন্ন প্রকার হতে পারে। অসংখ্য কম্প্লেইন হতে পারে যেগুলো ছোটখালো যেগুলো উপেক্ষনীয় যেমন কেউ কারও পোস্টার ছিঁড়ে ফেলল। কিন্তু উল্লেখযোগ্য যে কম্প্লেইন আমাদের কাছে ছিল, আমরা প্রায় ছয়শর মতো কম্প্লেইন পেয়েছি। তার মধ্যে আমরা প্রায় চারশও মতো কম্প্লেইন ইন্টারটেইন করেছি। ইন্টারটেইন করে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় থেকে কি করণীয় বা কি পদক্ষেপ গৃহিতব্য সেটা আমরা সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদেরকে জানিয়েছি।
বিদেশিরা আরও কোন বিষয়ে জানতে চেয়েছেন কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, এর বাইরে তারা আরেকটি জিনিস জানতে চেয়েছেন, তাহলো রেজাল্ট। আমরা তাদেরকে বলেছি রেজাল্টের ব্যাপারে আমরা একটা অ্যাপ করেছি, স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট অ্যাপ। সেটাও তাদেরকে অবহিত করেছি যে, প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং চলাকালে দুঘণ্টা পর পর আমাদের পোলিং স্টেশন থেকে আপলোড করা হবে। আপলোড করা হলে যেকোনো নাগরিক দেশে বা বিদেশে পৃথিবীর যেকোনো জায়গা থেকে এক্সেস নিয়ে জানতে পারবে, ভোটের পরিমাণটা কি ধরনের হচ্ছে। যেমন ধরুন আমরা বুঝিয়ে বলেছি ২০% হলো এরপর দেখা গেলো দুঘণ্টা পরে ৩০% হয়েছে। দুঘণ্টা পরে আরও ৩০% হয়েছে। যদি লাফ দিয়ে ৮০% হয়ে যায় তাহলে সেটা একটা সন্দেহের উদ্বেগ করবে। আমাদের এই অ্যাপসটা ইন্ট্রোডিউস করার উদ্দেশ্য হচ্ছে আমরা টোটাল যে স্বচ্ছতা এবং ক্রেডিবিলিটি যে অবস্থানটা সেটা আরও বেশি গ্রহণযোগ্য করার জন্য এই অ্যাপসটাও ইন্ট্রোডিউস করেছি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আরেকটা জিনিস জিজ্ঞেস করেছেন যে, আমাদের থেকে বা সরকার থেকে বা ইলেকশন কমিশন থেকে ভোটারদেরকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না, যে আপনাদেরকে ভোট দিতে যেতে হবে। তাদেরকে বুঝিয়েছি আমাদের থেকে চাপ সৃষ্টির কোনো কারণই নাই। তবে এটা আমাদের দায়িত্বের অংশ যে আমরা যখনই নির্বাচন করি, আমরা ভোটারদের কাছে একটা আবেদন রাখি যেটা আমাদের দায়িত্বের অংশ। আপনারা ভোটকেন্দ্রে এসে আপনাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। সেটা চাপ নয়, এটা হচ্ছে অ্যাওয়ারনেস। বরং চাপের কথা যদি আপনারা বলেন, একটা চাপ অন্য দিক থেকে হতে পারে। যেমন একটি বয়কটিং পলিটিক্যাল পার্টি তারা বর্জন করছেন এবং বর্জনটা যদি বর্জনই থাকে। কিন্তু ওখান থেকে যদি পরে সেটা এক ধরনের ভোটারদের প্রতি বার্তা যায় যে আপনারা যাবেনই না। তাহলে বরং একটা চাপ সৃষ্টি হতে পারে। এটা আমরা তাদেরকে ব্যাখ্যা করেছি।
কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, প্রায় ৮ লাখ সরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারি পোলিং কালেকশনের সাথে সম্পর্কিত থাকবেন। তারা ভোটগ্রহণ করবেন। আরও এক লাখ স্ট্যান্ড বাই থাকবেন। ৯ লাখ প্রস্তুত আছে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যে সংস্থাগুলো সব মিলিয়ে আনসার ও ভিডিপি, র্যাব, বিজিবি সব মিলিয়ে ৮ লাখ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মাঠে আছেন। তারা মাঠে থাকবে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত। এটি একটি বেশ বড় কর্মযজ্ঞ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রায় ৩ হাজার ম্যাজিস্ট্রেট এবং জাজেস তারাও কিন্তু মাঠে আছে।