উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে দ্রুততার সঙ্গে নতুন করে সাজাতে হবে : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আসন্ন শিল্পবিপ্লবের প্রস্তুতি হিসেবে দক্ষতার ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য দেশের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা নতুন করে সাজাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি আজ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন অ্যান্ড বিয়ন্ড (আইসি৪আইআর)-২০২১’ বিষয়ক দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল ভাষণে এ কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমাদের দক্ষতার ফাঁকগুলো শনাক্ত করতে হবে এবং বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাকে পুনরায় দ্রুততার সঙ্গে নতুন করে সাজাতে হবে।’
মো. আবদুল হামিদ তিনি আশা করেন, এ সম্মেলন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও সুপারিশ গ্রহণ করবে, যাতে দেশে ও বিশ্বব্যাপী চাকরির বাজারের চাহিদা পূরণের জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরি করা যায়।
বঙ্গভবন থেকে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল ভাষণে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শিল্প-সম্পৃক্ততা জোরদার করতে হবে। কারণ বর্তমান সরকার গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য এরই মধ্যে বাজেট বাড়িয়েছে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ পরামর্শ বলেন, আমরা কৃষি, অটোমেশন, সফটওয়্যার উন্নয়ন, ফ্রিল্যান্সিং এবং অন্যান্য খাতে ক্রমবর্ধমানভাবে আরও ভালো করছি, তবে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাঙ্কিং উন্নয়নে আরও জোর দিতে হবে।
রাষ্ট্রপ্রধান দুই ঐতিহাসিক মেগা অনুষ্ঠান বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের অংশ হিসেবে দুদিনব্যাপী আইসি৪আরবি-২০২১ আয়োজনের জন্য ইউজিসি কর্তৃপক্ষ এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের ধন্যবাদ জানান।
আবদুল হামিদ বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলার সাথে সামঞ্জস্য রেখে ‘একই দর্শন মাথায় রেখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তাঁর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দূরদর্শী নেতৃত্বে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত হয়েছে।’
সবাইকে চতুর্থ শিল্পবিপ্লবে যুক্ত হওয়ার আহবান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এটি এখন বাস্তবতা এবং আমরা এটি অস্বীকার করতে পারি না। আমরা কেমন অনুভব করি, কীভাবে কাজ করি, কীভাবে বাস করি, কীভাবে ভ্রমণ করি তার পুরো ল্যান্ডস্কেপটি পরিবর্তন করার সময় এসেছে।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, প্রথম শিল্পবিপ্লব এসেছে স্ট্রিম ইঞ্জিনের মাধ্যমে, দ্বিতীয় শিল্পবিপ্লব এসেছে বিদ্যুৎ আবিষ্কারের মাধ্যমে, তৃতীয় বিপ্লব এসেছে কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে, সম্পূর্ণ দৃশ্যপট পরিবর্তন করে ফোর্থ আইআর-এ যুক্ত হচ্ছে ইন্টেলিজেন্স। প্রচলিত চাকুরির বাজারে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে অটোমেশন।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবসায়িক ভবিষ্যতের পূর্বাভাসের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, পোশাকশিল্প এবং শপিং সেন্টারে রোবট ব্যবহার করা হচ্ছে, মেশিন লার্নিং সিমুলেশনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে, স্মার্ট কৃষিতে ইন্টারনেট অফ থিংস (আইওটি) ব্যবহার করা হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ফাইভ-জি প্রযুক্তি ব্যবসায়িক মডেল পুরোপুরি পরিবর্তন করছে এবং বিশ্বজুড়ে এ পরিবর্তনের আরও অনেক দৃষ্টান্ত বিদ্যমান।
দেশব্যাপী উচ্চ প্রযুক্তি, স্বল্প প্রযুক্তি ও প্রযুক্তিহীন মানুষদের সংযুক্ত করার মাধ্যমে গত দেড় বছরে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে প্রচলিত মুখোমুখি শিক্ষা থেকে মিশ্রিত, অনলাইন ও ডিজিটাল শিক্ষার দিকে সরে এসেছি, আমাদের এটা থেকে সরে যাওয়া উচিত নয়, বরং এ অর্জন আমাদের কাজে লাগাতে হবে এবং দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে।’
দক্ষতার অভাবে দেশের গ্রাজুয়েটদের বেকারত্বের হার নিয়ে রাষ্ট্রপতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বিদেশিরা অভ্যন্তরীণ চাকরির বাজারে আধিপত্য বিস্তার করছে, বিশেষ করে প্রযুক্তিগত এবং ব্যবস্থপনা স্তরে, করপোরেট সংস্থাগুলোতে এবং বহুজাতিক সংস্থাগুলোতে। তিনি বলেন, ‘এ প্রবণতার ফলে বাংলাদেশ থেকে যথেষ্ট পরিমাণে রেমিটেন্স আউটফ্লো হয়।’
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আরও বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের পরিবর্তনের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে হবে।’
ভূমির পরিমাণে বাংলাদেশ ৯৩তম বৃহত্তম দেশ, কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে এটি বিশ্বের অষ্টম বৃহত্তম দেশ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিপুল জনশক্তির কারণে উন্নত বিশ্বে আমাদের ভালো সুবিধা আছে, ফোর্থ আইআর আসায় অনেকে চাকুরি হারাবে, তবে আরও নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।’
আবদুল হামিদ দেশের চলমান আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন প্রবণতাকে শক্তিশালী করতে এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে ফোর্থআইআর এর জন্য প্রস্তুত করতে সুপ্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। কারণ, বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষা করছে।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহীদুল্লাহ অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।