মোংলা ইপিজেডে নারী শ্রমিক ডরমিটরি উদ্বোধন
মোংলা ইপিজেডে কর্মরত নারী শ্রমিকদের আবাসনের জন্য নবনির্মিত ডরমিটরি ‘মধুমালতী’ উদ্বোধন করেছেন বেপজার নির্বাহী চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল আবুল কালাম মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় ইপিজেড অভ্যন্তরে আধুনিক এ ডরমিটরি উদ্বোধন করেন তিনি।
ডরমিটরি ‘মধুমালতী’ উদ্বোধনের সময় উপস্থিত ছিলেন মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক, পরিচালক মুহাম্মদ নাজমুল আলমসহ ইপিজেডের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিনিয়োগকারী ও তাদের প্রতিনিধিরা।
মোংলা ইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক মাহবুব আহমেদ সিদ্দিক জানান, প্রায় ৭৪ হাজার ২৪৪ বর্গফুট আয়তনের চারতলাবিশিষ্ট এই ডরমিটরিতে এক হাজার আটজন শ্রমিক বসবাস করতে পারবে। অবস্থানগত কারণে মোংলা ইপিজেড লোকালয় থেকে দূরে হওয়ায় ইপিজেড সংলগ্ন এলাকায় শ্রমিকদের বসবাসের কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে তাদের দূরে বসবাস করতে হতো। যেখান থেকে বিশেষত নারী শ্রমিকদের যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। নারী শ্রমিকদের আবাসনের এ সমস্যা সমাধানে ২০১৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বেপজা গভর্নর বোর্ডের ৩৩তম সভায় ইপিজেডের শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত নারী শ্রমিকদের একা বা পরিবারসহ বসবাসের জন্য ডরমিটরি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মোংলা ইপিজেডে কর্মরত নারী শ্রমিকদের বসবাসের জন্য ২০১৯ সালে চারতলা বিশিষ্ট এ ডরমিটরির নির্মাণকাজ শুরু হয়ে চলতি বছর শেষ হয়। দেশের আটটি ইপিজেডের মধ্যে বেপজার নির্মিত এটিই প্রথম নারী শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি। ৩ দশমিক ৮ একর জমির উপর ২৬ দশমিক ২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ ডরমিটরিতে শ্রমিকদের বসবাসের জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ১২৬টি কক্ষ রয়েছে। ডরমিটরির নিচতলায় ৫০০ জনের একসাথে খাবার উপযোগী একটি ডাইনিং রুম, চিত্ত-বিনোদনের জন্য ইনডোর গেমিং রুম, টিভি রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলার প্রতিটিতে একটি করে নামাজ ঘর/কমিউনিটি স্পেস ও দুটি করে ডে-কেয়ার রুম রয়েছে। শ্রমিকদের সহজে উঠানামার জন্য রয়েছে পাঁচটি সিঁড়ি। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য নিয়মিত সংযোগের পাশাপাশি একটি জেনারেটর ও শ্রমিকদের জন্য পরিশোধিত সুপেয় পানির ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য নিরাপত্তা প্রহরী ছাড়াও সিসিটিভি নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে এবং অন্যান্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য পর্যাপ্ত লোকবল নিয়োগ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের সুষম উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী সিদ্ধান্তে ১৯৯৮ সালে মোংলা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩০৩-একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত এ ইপিজেডে ২৫৪টি শিল্প প্লট তৈরি করা হয়েছে যার বেশির ভাগই ইতোমধ্যে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মোংলা ইপিজেডে বর্তমানে ৩৪টি প্রতিষ্ঠান উৎপাদনরত ও আটটি প্রতিষ্ঠান উৎপাদন শুরুর অপেক্ষায়।
বাংলাদেশসহ জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র ও থাইল্যান্ডের বিনিয়োগকারীরা প্রায় ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে। মোংলা ইপিজেড থেকে এ পর্যন্ত রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের পণ্যসমাগ্রী। বর্তমানে আট হাজার ১৫০ জন বাংলাদেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন।
মোংলা ইপিজেডে ম্যানিকুইন হেড, উইগ, মার্বেল কলাম, মার্বেল টাইলস, তাঁবু, সার্জিক্যাল গাউন, লাগেজ ও ট্রাভেল ব্যাগ, কার সিট হিটার, সিগারেট ও সিগার, ক্রোকারিজ সামগ্রী, লাইটার, পাটের সুতা ও ব্যাগ, গার্মেন্টস এক্সেসরিজসহ বিশ্বখ্যাত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের পণ্য সামগ্রী তৈরি হয়।