সাভারে দুই চালকের রেষারেষিতে অ্যাম্বুলেন্সে শিশুর মৃত্যু, গ্রেপ্তার ৩
দুই চালকের রেষারেষিতে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে ছটফট করে মারা যায় ৯ বছরের শিশু আফসানা। ক্যানসার আক্রান্ত মুমূর্ষু অবস্থার কথা বলেও বোঝানো যায়নি অভিযুক্ত মাইক্রোবাসচালককে। সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় অ্যাম্বুলেন্স আটকে রেখে চালককে মারধর করেন তিনি। একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরেই মারা যায় আফসানা। এ ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে নিহত শিশুর বাবা আলম মিয়া বাদী হয়ে সাতজনের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন।
আফসানার বাবার করা সেই মামলায় মূল আসামি মাইক্রোবাসচালকসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ বুধবার রাতে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক (এসআই) সামিউল ইসলাম। সামিউল ইসলাম জানান, মামলার প্রধান আসামি মাইক্রোবাসের চালক নজরুল ইসলামের সন্ধানে প্রথমে তার দুই সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের পর প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরুলের অবস্থান নিশ্চিত করে আশুলিয়ার ‘সিএন্ডবি এলাকা’ থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা হলেন, মাইক্রোবাসচালক নজরুল, তাঁর সহযোগী টাঙ্গাইল জেলার ভুয়াপুর থানার দোপাকান্দি গ্রামের হানিফ খান (৪৫) এবং একই থানা এলাকার খুপিবাড়ী গ্রামের মো. ইমরান (২৫)। গ্রেপ্তারকৃত তিনজনের মধ্যে দুজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাইলে আদালত আজ বুধবার দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মূল আসামি নজরুল ইসলাম বর্তমানে পুলিশ হেজাফতে রয়েছেন।
এ দিকে শিশু আফসানার মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
জানা যায়, মঙ্গলবার বিকেলে ক্যানসারে আক্রান্ত শিশু আফসানাকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সটি মহাখালী ক্যানসার হাসপাতাল থেকে গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধায় ফিরছিল। পথে একটি মাইক্রোবাসকে ওভারটেক করে। পরে অ্যাম্বুলেন্স আশুলিয়ার বাইপাইলে পৌঁছালে মাইক্রোবাসটি সামনে এসে তার গতিরোধ করে। ওভারটেকের কারণে ক্ষুব্ধ হয়ে মাইক্রোবাসের চালক নজরুল নেমে অ্যাম্বুলেন্সের চালক মারুফ ও সহকারী ইমনকে মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্সের চাবিটিও ছিনিয়ে নেন নজরুল।
পরিবারের সবাই এবং অ্যাম্বুলেন্সের চালক ও সহকারী বারবার মাইক্রোবাসচালক নজরুল ইসলামকে রোগীর কথা বলে চাবি ফেরত দেওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি কথা শোনেননি। উল্টো হামলায় অংশ নেওয়ার জন্য বাইপাইল প্রাইভেটকারের স্ট্যান্ড থেকে হানিফ খানসহ অন্য সহকর্মীদের ফোন করে ডেকে আনে তিনি। এদিকে চালকদের আধা ঘণ্টা তর্কের মধ্যে ছটফট করতে করতে অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায় শিশু আফসানা। আফসানা আক্তার গাইবান্ধা জেলার সদর থানার মধ্য ধানগড়ার শাপলামিল এলাকার আলম মিয়ার মেয়ে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘আগামীকাল বৃহস্পতিবার নজরুলকে আদালতে নিয়ে রিমান্ড চাওয়া হবে।’ ঘটনায় জড়িত সবার পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান তিনি।