তিন দিনের সফরে ব্রুনাইয়ের সুলতান আসছেন শনিবার
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে আগামী ১৫-১৭ অক্টোবর ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বল্কিয়াহ বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফর করবেন। এই সফরটি হবে বাংলাদেশে ব্রুনাইয়ের রাষ্ট্রপ্রধান পর্যায়ের প্রথম সফর।
এই সফর কর্মসূচীটি ২০২০ সালের এপ্রিলে চূড়ান্ত করা হলেও করোনা অতিমারীর কারণে শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। সফরে ব্রুনাইয়ের সুলতানের নেতৃত্বে ব্রুনাই প্রতিনিধিদলে রাজপরিবারের সদস্যবৃন্দ, ব্রুনাইয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী এবং উচ্চপর্যায়ের সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
সফরের শুরুতে সুলতান হাজি হাসানাল বল্কিয়াহ-কে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনুষ্ঠানিক অভ্যর্থনা জানাবেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পরে তাঁকে ২১ বার তোপধ্বনিসহ গার্ড অব অনার প্রদান করা হবে। এরপর সুলতান সাভার জাতীয় স্মৃতি সৌধে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাইয়ের সুলতানের আমন্ত্রণে ২০১৯ সালের ২১-২৩ এপ্রিল ব্রুনাই সফর করেন। সফরে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা জোরদার করার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি ছয়টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়।
সফরকালে ব্রুনাইয়ের সুলতান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করবেন। বঙ্গভবনে তাঁর সম্মানে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে অংশগ্রহণ করবেন। সফরের দ্বিতীয় দিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ব্রুনাইয়ের সুলতানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ব্রুনাইয়ের সুলতানের এই রাষ্ট্রীয় সফরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি কিছু দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে দ্বি-পাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি, বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগ সহযোগিতা বিষয়ক সমঝোতা স্মারক ও দুই দেশ কর্তৃক নাবিকদের সার্টিফিকেটের স্বীকৃতি।
ব্রুনাই ১৯৮৪ সালে স্বাধীনতা লাভের পরপরই দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে ব্রুনাইয়ে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশন পুনঃস্থাপনের পর থেকে দু’দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে গত এক দশকে ব্রুনাইয়ের সঙ্গে বাণিজ্য, বিনিয়োগ, জ্বালানি, কৃষি, মানবসম্পদ উন্নয়নসহ নানাবিধ ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হচ্ছে।
ব্রুনাই তাদের ‘ভিশন ২০৩৫’-এর আওতায় গৃহীত উন্নয়ন কর্মসুচি বাস্তবায়নে বন্ধু রাষ্ট্রসমূহের সঙ্গে অর্থনীতির বহুমুখীকরণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, স্বাস্থ্য সেবা ও জ্বালানি ইত্যাদি খাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধিতে আগ্রহী। জ্বালানি সম্পদে সমৃদ্ধ উচ্চ আয়ের দেশ ব্রুনাইয়ের সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা স্থাপনের মধ্যে দিয়ে দু’দেশই লাভবান হতে পারে।
সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থা, মাদক ও মানব পাচার, পরিবেশ সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, টেকসই উন্নয়নসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই এক ও অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে থাকে এবং জাতিসংঘ, ওআইসি, এআরএফ, কমনওয়েলথ সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও বহুপাক্ষিক ফোরামে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী এবং সুলতানের মধ্যে অধিকতর মতবিনিময়ের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও এ সফর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সংগঠন আসিয়ানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক উন্নয়ন ও আসিয়ান এর ‘সেক্টরাল ডায়লগ পার্টনার’ হওয়ার বিষয়টি অধিকতর গুরুত্ব নিয়ে আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করবে।