হৃদরোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৮৮ শতাংশই পুরুষ
দেশে হৃদরোগে আক্রান্তের গড় বয়স ৫৩ বছর। এরমধ্যে ৮৮ শতাংশ পুরুষ। এছাড়া বর্তমানে প্রায় ৪৬ শতাংশ হৃদরোগীরই বয়স ৫০ বা এর নিচে।
আজ সোমবার বিশ্ব হার্ট দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) বি-ব্লকে কার্ডিওলজি বিভাগের একাডেমিক অ্যান্ড রিসার্চ সেল ও ইউনিভার্সিটি কার্ডিয়াক সেন্টার আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. এসএম মোস্তাফা জামান।
মূল প্রবন্ধে বলা হয়, দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই করোনারি ধমনী রোগের (করোনারি আর্টারি ডিজিজ) প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়ার অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে ইস্কেমিক হার্ট ডিজিজে আক্রান্ত হয়ে তুলনামূলক বেশি মানুষ অকাল মৃত্যুবরণ করছে, যা প্রতি এক লাখে ২০৩ দশমিক ৭ জন, শ্রীলঙ্কায় মৃত্যুবরণ করছে ৮৪ দশমিক ৫ জন, পাকিস্তানে ২২২ দশমিক ৯ জন, নেপালে ১৫২ দশমিক ৬ জন, মিয়ানমারে ১৬৪ দশমিক ৭ জন, মালদ্বীপে ৫০ দশমিক ৯ জন, ভারতে ১৬৫ দশমিক ৮ জন, ভুটানে ২২১ দশমিক ৭ জন, আফগানিস্তানে ৩২৮ দশমিক ৬ জন।
বাংলাদেশ স্টেপস সার্ভের বরাতে জানানো হয়, ২০১৭ সালে বাংলাদেশের মোট মৃত্যুর ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ ঘটেছে অসংক্রামক ব্যাধিতে। তার মধ্যে কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজে ৩৬ দশমিক ১ শতাংশ, ক্যানসারে ১১ দশমিক ২ শতাংশ, ক্রনিক রেস্পাইরেটরি ডিজিজে ৯ দশমিক ৩ শতাংশ, ডায়াবেটিস মেলাইটাসে ৫.৮ শতাংশ।
বক্তাদের আলোচনায় সেমিনারে হৃদরোগ প্রতিরোধে বেশ কিছু পদক্ষেপ উঠে আসে। তারা বলেন, স্বাস্থ্য সম্মত সুষম খাবার, ধূমপান পরিহার করা ও নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম হার্ট ভালো রাখে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশের উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থা দৃঢ় করা জন্য সুস্বাস্থ্যের বিকল্প নেই। কারণ ব্যক্তি নিজে সুস্থ থাকলে দেশ ভালো থাকবে। যদি কোনো ব্যক্তি একদিন অসুস্থ থাকেন, তিনি অফিস করতে পারবেন না। তার অসুস্থতার কারণে অনেক কাজ বাকি থাকবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইউজিসি অধ্যাপক ডা. সজল কৃষ্ণ ব্যানার্জি বলেন, হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শ্রেণিভেদ নেই। যেকোনো শ্রেণির ব্যক্তিরা হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই এ রোগ সম্পর্কে চিকিৎসকদের নিজ ঘর থেকেই সচেতন হতে হবে। কারণ আমাদের কাছে অনেক চিকিৎসকের পরিবারের সদস্য হৃদরোগের সমস্যা নিয়ে আসেন। তাদের অধিকাংশ হৃদরোগ সচেতন নয়। সব শ্রেণি পেশার মানুষকে হৃদরোগ সচেতন হতে হবে।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএসএমএমইউর হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. আরিফুল ইসলাম জোয়ারদার ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোস্তাহিরুল হক। সভাপতিত্ব করেন হৃদরোগ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. একেএম ফজলুর রহমান। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন হৃদরোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. রসুল আমিন।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. মো. জাহিদ হোসেন, উপ-উপাচার্য (একাডেমিক) অধ্যাপক ডা. একেএম মোশাররফ হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আতিকুর রহমান, ডেন্টাল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল, সার্জারি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ হোসেন, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল, অধ্যাপক ডা. মঞ্জুর মাহমুদ, পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. নজরুল ইসলাম খান, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. আব্দুল্লাহ আল হারুন, মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়ক সহযোগী অধ্যাপক ডা. এস এম ইয়ার ই মাহবুবসহ হৃদরোগ বিভাগের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।